একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণসহ পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশের এই দিন ঠিক করে দেয়।
এদিন অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন জেয়াদ আল মালুম। আসামিপক্ষে ছিলেন সাত্তার পাহলোয়ান।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রেজিয়া সুলতানা জানিয়েছেন, এ মামলার ১২ আসামির বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের একটি; অপহরণ করে হত্যার দুটি; অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের দুটি অভিযোগ রয়েছে।
সাখাওয়াত হোসেন (৬১) ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন: মো. বিল্লাল হোসেন (৭৫), মো. আকরাম হোসেন (৫৯), অজিহার মোড়ল ওরফে ওজিয়ার মোড়ল (৬৪), মো. ইব্রাহিম হোসেন (৬০), শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান (৬১), মো. আ. আজিজ সরদার (৬৫), আ. আজিজ সরদার (৬৬), কাজী ওহিদুল ইসলাম (৬১), মো. লুৎফর মোড়ল (৬৯), আব্দুল খালেক মোড়ল (৬৮), ও মশিয়ার রহমান (৬০)।
১২ আসামির মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনসহ চারজন কারাগারে আটক আছেন। বাকি সবার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানান রেজিয়া সুলতানা।
২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এই ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। গত ১৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মোট পাচঁটি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ আশ্বিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পের (তহসিল অফিস) কমান্ডার সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে ১০ থেকে ১২ জন রাজাকার কেশবপুর থানার বগা গ্রামে একজন নারী এসএসসি পরীক্ষার্থীকে জোর করে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং ধর্ষণ করে।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৮শে আশ্বিন আনুমানিক ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে কেশবপুর থানার ২ নং সাগরদাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদ চাদতুল্য গাজীকে সাখাওয়াতসহ ২৫ থেকে ৩০ জন রাজাকার ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে চারদিন আটক রেখে নির্যাতন করে পয়লা কার্তিক তাকে গুলি করে হত্যা করে।
তৃতীয় অভিযোগ: ওই একই তারিখে চিংড়া গ্রামের নুর উদ্দিন মোড়লকে ধরে নিয়ে সাখাওয়াতের নির্দেশে নির্যাতন করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের শেষ দিকে এক রাত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্স কেশবপুর থানা হিজলডাঙ্গা গ্রামের আ. মালেক সরকারকে তার বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ২৮ আশ্বিন সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে চিংড়া বাজারে গুলি করে হত্যা করে।
পঞ্চম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে বেলা ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা মিরোন শেখকে তার বাড়ি থেকে ১০ থেকে ১২ জন রাজাকার ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তিনি পালাতে চাইলে রাজাকারা তাকে গুলি করে। এতে তার বাম হাতে গুলি লাগে। এরপর তাকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
সাখাওয়াত হোসেন বর্তমানে জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা