শিকারিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার চরম হুমকির মুখে পড়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রজাতির বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাঘ গণনাকারীদের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১০ বছর আগেও ৪১৯টি বাঘের অস্তিত্ব ছিল। অসাধু চক্রের অপতৎপরতায় এ সংখ্যা কমে বর্তমানে ১০৬-এ গিয়ে ঠেকেছে। বিশ্বব্যাপী বাঘের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ উপলক্ষে এবার বাঘের বংশবিস্তার ও সুরক্ষায় পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি।
বাংলাদেশে বাঘের অভয়ারণ্য সুন্দরবন। এটি একসময় বাঘ উৎপাদনের ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু বাঘশিকারিদের সংঘবদ্ধ চক্রের অপতৎপরতায় এই দুর্লভ প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক মাসে সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকা থেকে তিনটি বাঘের চামড়া, বেশ কিছু হাড় ও দাঁত উদ্ধার করেছে র্যাব-৮।
সূত্র জানায়, বাঘ শিকারে তৎপর রয়েছে স্থানীয় ছয়টি চক্র। এর মধ্যে দুটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাকিদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে প্রশাসন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডোরাকাটা হলুদের সৌন্দর্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সম্মোহনের মতো টানে এই বাঘ। সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার মানুষ ও যারা জীবিকার প্রয়োজনে বনে প্রবেশ করে, তারা কেউই বাঘের নাম উচ্চারণ করে না। কেউ বড় মামা, কেউ বড়মিয়া, গাজী, ঠাকুর প্রভৃতি নামে ডাকে। সৌন্দর্য, মর্যাদা আর শক্তিমত্তায় অতুলনীয় এ বাঘের অন্যতম আদি নিবাস বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায়। এ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, সাইবেরিয়া অঞ্চল, সুমাত্রা, জাভা, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। হিমালয়ের মতো সুউচ্চ ও হিমশীতল বৈরী পরিবেশেও এরা চমৎকার খাপ খাইয়ে নিতে পারে। একটি পুরুষ বাঘের দৈর্ঘ্য মাথা থেকে লেজসহ সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গড় ওজন ২০০ থেকে ২৩৬ কেজি। স্ত্রী-বাঘ আকারে ছোট হয়। দৈর্ঘ্য তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাঘের পায়ের ছাপ গোলাকৃতির আর বাঘিনীর লম্বাটে হয়।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ক্রমাগত বনাঞ্চল উজাড়, পর্যাপ্ত খাবারের অভাব ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এই প্রাণীর বেশির ভাগ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। অপরূপ এই প্রাণীর বংশ রক্ষায় আইন করে অবৈধ শিকার বন্ধের মাধ্যমে সুরক্ষা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বলছেন, দুর্লভ এই প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা দরকার। জানতে চাইলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জাত রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের বাঘ প্রজনন এলাকায় গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ জুলাই, ২০১৫/মাহবুব