কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত তিনজনের পরিবার দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আর সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে অন্য মামলাটি দায়ের করেছে পুলিশ।
বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, পুলিশের মামলাটির বাদী থানার এসআই বাহার মিয়া। ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলার আজাহারে অজ্ঞাতপরিচয় তিন হাজার দুইশজনকে আসামি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে নিহত আংকুর মিয়ার বড়ভাই মৌলভী বশির একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। আর অপর হত্যা মামলাটি করেছেন নিহত জাকির হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তার মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাতে বাঁশখালীর সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের একটি কমিটি করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মমিনুর রশিদকে কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে গণ্ডামারা ইউনিয়নের হাজীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় এলাকাবাসীর মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র দুই রকম ভাষ্য দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রের কারও মতে নিহতের সংখ্যা ছয়, আবার কারও মতে আট। সংঘর্ষের সময় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ ও আনসার সদস্য ১১ এবং স্থানীয়দের মধ্যে ৯ জন আহতের খবর সরকারি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গুলিবিদ্ধ ও মারাত্মক আহতদের দ্রুত চিকিৎসার্থে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ কারণেই নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে স্থানীয়রা জানান। গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা যায় চমেকসূত্রে।
স্থানীয় সূত্রমতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— মুর্তুজা আলী (৫২), আংকুর আলী (৪৫), জাকের আহমেদ (৩৫), গোলাম মোহাম্মদ (৪০), বাদশা (৩০)। এ ছাড়া নিহত মহিলাসহ অন্যদের নাম রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে এলাকাবাসীর এ সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহির আলম বলেন, বাঁশখালীর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকেই জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। অনেকেই গুরুতর আহত। তবে তাদের নাম এখনো জানা যায়নি।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম হাফিজ আকতার বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশে জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করে এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এমনকি পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। নিহতের বিষয়ে শুনেছি। কিন্তু নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’
বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা