সম্প্রতি বিদেশি হত্যা, বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংঘাত সৃষ্টি করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এই সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বাংলাদেশে সব মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এক হয়ে বাস করবে, সহমর্মিতা থাকবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। সব ধর্ম ও বর্ণের নাগরিকদের সমঅধিকার নিয়ে বাস করবে। সকলের রক্ত মিশে আছে এই দেশের মাটিতে। আপনারা এই মাটির সন্তান। আপনারা আপনাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, তারা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীরা কখনো সফল হবে না। এই দেশে সব ধর্মের মানুষই সমান অধিকার নিয়ে থাকবে।
সোমবার সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার বসবাস করার অধিকার আছে। সবাই অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। এটাই আমরা চাই।
সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া তো সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পাচ্ছে। কেউ তো আর ভাগ করে নিচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে ভেদাভেদ থাকবে কেন? আগামী বৃহস্পতিবার পালিত হবে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা। এটাই জন্মাষ্টমীর উৎসব। এই উৎসব শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মিলেমিলে বসবাসের ঐতিহ্য আছে এখানে। এটাই বাংলাদেশের শক্তি। এখানে সব ধর্মের মানুষ সব সময় সবার উৎসবে শামিল হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম সবাই একসঙ্গে মিলে উৎযাপন করে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এটাই বাংলাদেশের চেতনা।
ধর্মের নামে জঙ্গি তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোনো মানবতাবোধ নেই। তারা আসলে কোনো ধর্ম বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্ম নাই, রাষ্ট্র নাই। জঙ্গিবাদই তাদের কাজ। সব ধর্মে সহনশীলতা, ভাতৃত্ববোধ, শান্তির কথা বলা আছে। কিছুদিন আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা সবাইকে আহ্বান জানালাম, সবাই এক হলেন। ঐক্য গড়ে উঠলো। শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপনাদের দাবি দাওয়া করতে হয় না। আমরা এমনিতেই সবার কল্যাণে কাজ করি। যখন ইমামদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করেছি তখন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের জন্যও করে দয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের সম্পত্তি উত্তরাধিকারকে দিয়ে যেতে অনেক কর দিতে হতো। আমরা সেটা থেকে রেহাই দিয়েছি। এখন যে কেউ চাইলে সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় স্বামী মারা গেছে স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়ে। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ উত্তরাধিকার আইন নাই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিল আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে। এই আইনের খসড়া আপনারাই তৈরি করে দেন। আমরা পাস করে দেবো। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভালো হবে।
অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহাদেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমেশ ঘোষ, মহানগর সার্বজনীন মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/ ২২ আগস্ট ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন