লক্ষ্মীপুরে লাখো মানুষের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে বাবার মতো জীবন দিতে হলেও প্রস্তুত রয়েছেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার নিজের ব্যাক্তিগত জীবনের কোন চাওয়া পাওয়া নেই, আমিতো সব হারিয়েছি, আমার মা-বাবা, ভাই সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে তথা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরে এসে আমার মায়ের স্নেহ, বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ ফিরে পেয়েছি। তাই আপনাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই।”
লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় মঙ্গলবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বিএনপি জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষকে দিতে, আর বিএনপি ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে চিনিমিনি খেলতে, এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয় মানুষকে হত্যা করা, খুন করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, জনগণের উপর অত্যাচার নির্যাতন আর এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ করাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।”
প্রধানমন্ত্রী সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, “কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নে এগিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এখন বাংলাদেশ। দেশে কোন গৃহহারা ও ভূমিহীন থাকবে না, প্রত্যেকটি মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর বাড়ি করে দেয়া হবে।”
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় ৪ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে নিয়ে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর বাংলাদেশে হত্যা, খুন ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। একের পর এক খুন শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের খুন করা শুরু হয়েছে। দেশ পিছিয়ে গেছে, গরীব থেকেছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে। বিএনপি জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ঘরে থাকতে দেয়নি। করেছে ত্রাসের রাজত্ব, সৃষ্টি করেছে জঙ্গিবাদ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের বলেন, বিএনপি’র আন্দোলনের মরা গাঙ্গে(নদী) জোয়ার আসে না। ৫৯৬ জনের কমিটিতে থাকা কারো মিছিল মিটিং করার সাহস নেই, তারা এখন নালিশি পার্টি হিসেবে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার আমলে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি মানুষ এখন মোবাইল ব্যবহার করছে, ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। উন্নয়নের বাংলাদেশে জনগণ এখন আওয়ামী লীগের সাথে আছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, এ কে এম শাহজান কামাল এমপি, লায়ন এম অউয়াল এমপি, আব্দুল্লাহ আল মামুন এমপি ও পৌর মেয়র আবু তাহের প্রমুখ।
যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী:
রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষন প্রকল্প (১ম পর্যায়), চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পরিষদ ভবন(লক্ষ্মীপুর সদর), উপজেলা পরিষদ ভবন কমলনগর, উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম (কমলনগর), লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (তয় ও ৪র্থ) , উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর, ও প্রাণী হাসপাতাল (কমলনগর)।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, মজু চেীধরীর হাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এর প্রশাসসিক ভবন ও নাবিক নিবাস, লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ অফিসার্স মেস, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামে ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপ-কেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারাপুর সেতু, চেওয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর, লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপনী বিতান, আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর কমপ্লেক্স (রামগঞ্জ), লক্ষ্মীপুর পৌর আজিম শাহ(রা) হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন-কাম পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন্স মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (রায়পুর), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন(কমলনগর)।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব