'বেজক্যাম্পেই অবস্থান করছি। আবহাওয়া আজ খুবই খারাপ। পুরোটাই প্রতিকূলে। একটু অনুকূলে হলেই উপরের দিকে রওনা দিব।' ওয়্যারলেস ফোনের মাধ্যমে হিমালয়ের বেজক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এভাবেই নিজের অবস্থান জানালেন মৃদুলা।
সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই তার হাত দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়তে যাচ্ছে আরও একবার। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় হিমালয়ের বহুকাঙ্ক্ষিত বেজক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। ভূমি থেকে ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার, অর্থাৎ ১৭ হাজার ৫৯৮ ফুট ওপরে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের এই তরুণী। ওয়্যারলেসে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা নিশ্চিত করেন মৃদুলা নিজেই। এর আগে শুক্রবার ৫ হাজার ১৮০ মিটার উঁচু বরফে ঢাকা গোরাকশিপে পৌঁছান মৃদুলা। গতকাল থেকেই ভীষণ ঠান্ডা ও তীব্র বাতাসের সঙ্গে লড়াই চলছে তার। কিন্তু সেসব তার কাছে কিছুই নয়। এতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন, এ বিষয়টিই তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৃদুলা আমাতুন নূর। নেপাল ও ভারতে বেশ কিছু পর্বতারোহী বন্ধুর কাছে পর্বতারোহণের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
গত বছর অক্টোবরে হিমালয়ের শীতিধার চূড়ায় আরোহণের পর থেকেই মৃদুলার স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা। এখন তিনি তার স্বপ্নের কাছাকাছি। সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসের প্রথমার্ধে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের ব্যাজটাও পরতে সক্ষম হবেন তিনি। মৃদুলা মাউন্ড এভারেস্ট জয় করতে সক্ষম হলে তিনি হবেন তৃতীয় বাংলাদেশি নারী। এর আগে নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন বাংলাদেশের হয়ে এভারেস্ট জয় করেন। সামান্য একটি ঘটনাই বদলে দিয়েছে মৃদুলার জীবনের বাঁক। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে রাঙামাটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ একটি পাহাড় দেখে চূড়ায় উঠতে ইচ্ছে করল। অথচ ট্র্যাকিংয়ের সামান্য জ্ঞানটুকুও ছিল না তার। কাউকে কিছু না বলেই ধীরে ধীরে উঠতে লাগলেন। কখনো পড়ে যাচ্ছিলেন, কখনো হাত ছড়ে যাচ্ছিল, কখনো পিছলে নেমে আসছিলেন কিছুটা। এর পরও সেবার একেবারে দুই হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলেন তিনি। সেই থেকেই পাহাড় জয়ের নেশা পেয়ে বসে তাকে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে হিমাচল প্রদেশের মানালির অটল বিহারি বাজপেয়ি ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মৃদুলা। প্রতিষ্ঠানটি তাকে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করে। বাংলাদেশ থেকে একাই ছিলেন তিনি। ছিলেন ৮০ জনের গ্রুপে সবচেয়ে কম বয়সী। এ ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তার টানা ২৬ দিনের বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে হিমালয়ের শীতিধার চূড়ায় ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। এই শৃঙ্গ জয় করা তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী মেয়ে। ২৫ অক্টোবর ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন রণধীর সিং তাকে ওই চূড়া জয়ের ব্যাজ পরান।
বিডি প্রতিদিন/১৬ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল