অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অপ্রদর্শিত (কালো টাকা) ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ওই অর্থ বৈধ করার সুযোগের বিপরীতে সরকার এক হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
অর্থমন্ত্রী দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২-৭৫ (আওয়ামী লীগ সরকার) দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা, ১৯৭৬-৮১ (জিয়াউর রহমানের সেনা শাসন ও বিএনপি সরকার) ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ১৯৮২-৯০ (এইচ এম এরশাদের সেনাশাসন ও জাতীয় পার্টির সরকার) ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ১৯৯১-৯৬ (বিএনপি সরকার) ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ১৯৯৭-২০০০ (আওয়ামী লীগ সরকার) ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ২০০১-০৬ (বিএনপির নেতৃত্বাথীন চারদলীয় জোট সরকার) ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার) ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০০৯-১৩ (আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার) ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত (আওয়ামী লীগ সরকার) ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ অপ্রদর্শিত টাকা সাদা করা হয়েছে।
৮ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে
মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কৃষি ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ও বিদেশি ব্যাংকসমূহের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছওে ৩৮টি বেসরকারি বাণিজ্যক ব্যাংক ৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা কৃষি ঋণ ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ হাজার ৫৮৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কৃষি ঋণ ও পল্লী ঋণ বিতরণ করে তারা।এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ৩৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ২৮৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ২৭৬ কোটি ২ লাখ টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ২৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ২২৫ কোটি ৪ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ২১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং এবি ব্যাংক লিমিটেড ২০৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে।
বস্তিবাসীদের আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে
এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয়ে নগরীর বস্তিবাসীদের আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৫ কোটি মার্কিন ডলার বিশ্বব্যাংকের ঋণ এবং বাকি ৭০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশ সরকার দেবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গত বছরের ৩০ জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ১৯টি কমিউনিটিতে বসবাসরত বস্তিবাসী এবং অস্থায়ী বাসিন্দাদের আবাসন, অন্যান্য অবকাঠামো এবং সেবাসমূহ উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বস্তিবাসীদের আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা, জমির নিরাপত্তা, পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য খাতে সহায়তা দেওয়া হবে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
বিডি প্রতিদিন/৮ জুন, ২০১৭/ফারজানা