সরকারি-বিরোধী দলের এমপিরা এবার ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারসহ ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব হ্রাসে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি-বিরোধী দলের এমপিরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অর্থমন্ত্রী জনগণের কথা বুঝেন না। ব্যাংক থেকে টাকা কেটে নেওযার খবরে সবাই আতঙ্কিত। নারীরা ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেবে? জনগণের অর্থ-সম্পদ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণের নামে ব্যাংক লুট হচ্ছে প্রতিবছর। তারপরও প্রতিবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোকে করের টাকা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকে রাখা গরীদের সঞ্চয় থেকে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক কেটে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে এক লাখ টাকা থাকলেই সবাই সম্পদশালী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি-বিরোধী দলের এমপিরা এসব কথা বলেন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ২য় দিনে বক্তব্য রাখেন সরকারি দলের এনামুল হক, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. আবু জাহির, কাজী কেরামত আলী, আবদুল মালেক, আবদুল মজিদ খান, বেগম আমিনা আহমেদ, আফতাব উদ্দিন সরকার, মাহজাবীন খালেদ, বিজেপির মো. রুহুল আমিন, জাতীয় পাটির পীর ফজলুর রহমান, বেগম খুরশীদ আরা হক, ওয়ার্কার্স পার্টি টিপু সুলতান প্রমুখ।
সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, সরকারি-বেসরকারি দল নির্বিশেষে সকল সদস্যই ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রতাহারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একইসঙ্গে তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করা, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা করা, নিত্যপণ্যের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিএনপির সমালোচনার জবাবে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, তাদের আমলে হাওয়া ও খোয়াব ভবনের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে সে আমলের বাজেটের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের কোন ভবন নেই, আর লুটপাট ও দুর্নীতিও নেই।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ঋণের নামে ব্যাংক লুট হচ্ছে প্রতিবছর। চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ২৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। অথচ প্রতিবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোকে করের টাকা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে ঋণ খেলাপিদের উৎসাহিত করছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি এক সময় বলেন, ৪০ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না। আবার তিনিই জনগণের ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক কেটে নিতে বলেন, এক লাখ টাকা থাকলেই সবাই সম্পদশালী।
বাজেটের ওপর আলোচনাকালে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির খুরশীদ আরা হক বলেন, অর্থমন্ত্রী জনগণের কথা বুঝেন না। বুঝতেও চান না। উনি না বুইঝাই বাজেট করছেন। গরিবের সঞ্চয় থেকে যদি আবগারি কাটেন তবে ক্যামনে চলবে? এটা আমরা মানি না। এ বাজেট শুভঙ্করের ফাঁকি। মহিলারা সঞ্চয় করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেবে। কেউ শান্তিতে নেই। আমি তো নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ চাই। একই সাথে দেশ ও জনগণের স্বার্থে নির্বাচন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও এক/দুই মেয়াদে ক্ষমতায় দেখতে চান জাতীয় পার্টির এই এমপি ।
খুরশীদ আরা হক বলেন, ‘আমরা কোনও নির্বাচন চাই না। প্রধানমন্ত্রী আছেন, থাকবেন। আরও পাঁচ-দশ বছর দেশ চালাবেন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে থেকেই সমালোচনা করেন। এটা শোভা পায় না।’
পাশাপাশি সংসদে মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে খুরশীদ আরা হক বলেন, আমরা কী বলবো। একজন মন্ত্রীও নাই। আমরা বলেই যাচ্ছি। মন্ত্রীরা খায়, আর পতাকা উড়ায়া গাড়ি চালায়। আমরা বসে থাকি।
বিডি প্রতিদিন/৮ জুন, ২০১৭/ফারজানা