বেশির ভাগ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম সাপ। পৃথিবীতে একমাত্র এন্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই সাপের দেখা মেলে। জল ও স্থল উভয় স্থানেই বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বসবাস করলেও স্থলেই এদের বেশি দেখা যায়। হাত-পা বিহীন এই লম্বা সরীসৃপের প্রতি মানুষের যেন কৌতূহলের শেষ নেই। কোথাও সাপ দেখা গেলে মানুষজন লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে যায় পিটিয়ে মারতে। সাপের সঙ্গে যেন মানুষের চিরকালের শত্রুতা। বিষধরদের জন্য বিখ্যাত হলেও বেশীরভাগ প্রজাতির সাপই নির্বিষ।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপের উপদ্রব হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত ৪ ও ৬ জুলাই রাজশাহীর দুটি বাড়িতে ১৫২টি গোখরা সাপ মারার ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে। গত কয়েকদিনেই গণমাধ্যমে শত শত বিষাক্ত সাপ হত্যা ও উদ্ধারের খবর এসেছে। সর্বশেষ ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের দুবলাচরা গ্রাম থেকে শুক্রবার বিকেলে দুই শতাধিক তাজা গোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এখন জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ কেন এত সাপের উপদ্রব?
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় রাজবাড়ীতে অবস্থিত দেশের অন্যতম একটি সাপের খামারের উদ্যোক্তার সাথে। রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের কর্ণধার রনজু বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব যায়গা থেকে সাপ উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে এগুলো আসলে সাপের বাচ্চা। বড় সাপ থেকে বাচ্চা সাপই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এই সময়টা সাপের বাচ্চা উৎপাদনের সময়।
রনজু বলেন, এই সময়ে কোবরা নাজা নাজা সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হচ্ছে। আর এক মাসের মধ্যে নাজা কাউথিয়া সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। সাপ সাধারণত নিরাপদ জায়গায় ডিম পারে। একদিকে বর্ষার মৌসুম অন্যদিকে বন্যা হওয়ায় সাপগুলো আমাদের মাটির ঘরবাড়িতে বাসা বেধে ডিম পারার চেষ্টা করে। ভূ-প্রকৃতির এই পরিবর্তনের কারণে সাপ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য আবাসিক এলাকায় চলে আসছে। বিশেষ করে এরা কাঁচা ঘরবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সাপের ডিম এবং বাচ্চা উৎপাদনের সময়। এই সময়ে কোবরা নাজা নাজা এবং কাউথিয়া ডিম ও বাচ্চা দেওয়ার সময়।
রনজু বলেন, সাপের প্রিয় খাবার ইঁদুর। আর যেসব বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত বেশি সেখানে সাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
নিরাপদ যায়গা হিসেবে সাপ বাড়ির ইঁদুরের গর্তে ডিম ফোটাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গোখড়া সাপ বছরে ১ বার ডিম দেয়। এরা বছরে একবার ডিম দিলেও একবার মিলনে দুই বছরে দুই বার ডিম দিতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ জুলাই ২০১৭/হিমেল