‘অপহরণকারীরা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নাকে একটা রুমাল ধরে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন তারা আমাকে গাড়ির ভিতরে দুটি সাদা স্ট্যাম্পে ইংরেজি ও বাংলায় দুটি স্বাক্ষর নেয়। তবে কেন এই স্বাক্ষর নিয়েছে, আমি বুঝছি না। তারা হয়তো আমাকে কোনো চাপে রাখতে এটি করেছে।’ ঢাকার লালমাটিয়া থেকে অপহূত কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকার এসব কথা বলেন।
গতকাল দুপুরে পারভেজ লালমাটিয়ার সি ব্লকের বাসার নিচে সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার নামাজ পড়ে বাসায় ঢোকার মুখে একজন আমাকে সালাম দেয়। আরেকজন পেছন থেকে এসে আমাকে টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলেই তারা আমাকে মুখোশ পরিয়ে দেয়। স্বাক্ষর নেওয়ার পর আমাকে কাঞ্চন ব্রিজের পাশে নামিয়ে দেয়। এরপর আমি বাসায় ফোন করি। তারা গিয়ে ৩০০ ফুট এলাকা থেকে আমাকে নিয়ে আসে। আমি এ ঘটনায় আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। পারভেজ বলেন, আমার সঙ্গে কারও কোনো ব্যবসায়িক বিরোধ নেই। তবে এলাকাতে রাজনৈতিক বিরোধ আছে। আমি এক বছর ধরে এলাকায় যাই না। কারণ আমার ওপর আগেও হামলা হয়েছিল। আমাকে মারধর করা হয়নি, তবে অজ্ঞান করা হয়েছিল। আমাকে সহযোগিতা করায় আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশের গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পারভেজ কুমিল্লা-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আসলে বুঝতে পারছি না কেন হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। বেশ কিছুদিন ধরেই নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন পারভেজ। স্ত্রীকে বলেছিলেন, গাড়ি ছাড়া ছেলেদের নিয়ে বাইরে না যেতে। নিজেও একা ঘোরাফেরা করতেন না। ছয় দিন আগে হঠাৎ ছেলেকে নিয়ে রিকশায় বা হেঁটে স্কুলে যেতে মানা করেন। গাড়ি ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করেন। তুলে নিয়ে যাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ১০টায় একটি মোবাইলফোন থেকে পারভেজ তার স্ত্রীকে জানান, তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তিনি রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় আছেন। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যেতে বলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, পারভেজ ফিরে এসেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। যে গাড়িতে তাকে তোলা হয়েছিল সেই গাড়ির নম্বরটি ‘ব্লক’। বিআরটিএ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে এই নম্বর তারা এখনো কাউকে দেয়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে অপহরণকারীদের কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।