মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) যৌন নিপীড়নের পর কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়োর পর হত্যাকারীরা মাদ্রাসার পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিকের দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্রে জানা গেছে, যখন সবাই রাফির শরীরের আগুন নেভাতে ব্যস্ত তখন হত্যাকারীরা বোরকা খুলে মাদ্রাসার পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিকের দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়।
এছাড়া সূত্র আরও জানায়, গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে রাফিকে পুড়িয়ে মারতে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার সহযোগীরা অংশ নিয়েছে- এটা এক রকম নিশ্চিত। এমনকি এ ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত। ঘটনার আগের দিন স্থানীয়রা মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি এবং অধ্যক্ষের দুই সহযোগী নুরুদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে মাদ্রাসার আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার দুই সহযোগী ছিলেন নুরুদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। তারা দুইজনই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ইতিমধ্যে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত যে চারজন বোরকা পরা ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাকে প্রত্যাহারের পর তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।
গত বুধবার রাতে না ফেরার দেশে চলে যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮)। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। টানা ১০৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানেন এই ছাত্রী।
প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।
তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন নুসরাত।
তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এরপর না ফেরার দেশে চলে যান মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।
বিডি প্রতিদিন/১৩ এপ্রিল ২০১৯/আরাফাত