শক্তিশালী রূপে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। এ কারনে পায়রা ও মংলা সমূদ্র বন্দরকে ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলের সর্বত্র মাইকিংয়ের পাশাপাশি বাজানো হচ্ছে সাইরেন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রগুলোতে টাঙানো হয়েছে সাংকেতিক ৩ (তিন) পতাকা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করলেও বিভাগের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে গতরাতে অবস্থানকারী বেশীরভাগ মানুষ তাদের নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে যারা এখনও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রয়েছেন তারা পড়েছেন নানামুখি সমস্যায়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর টয়লেট-বাথরুমগুলো অনেকাটাই ব্যবহার অনুপযোগী। রয়েছে উপযুক্ত খাদ্যেও সংকটও। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে দাবী করে বিভাগীয় কমিশনার বলেছেন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর মানবিক সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। বাড়ি ফিরে যাওয়া মানুষকে আবারও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সব শেষ খবর অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পায়রা সমূদ্র বন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার এবং মংলা সমূদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ কিলেমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ ফিট উচু জলোচ্ছাস হতে পারে। এ কারনে পায়রা ও মংলা সমূদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আগে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মাইকিংয়ের পাশাপাশি বিপদ সংকেত ‘সাইরেন’ বাজানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচীর (সিপিপি) প্রতিটি কেন্দ্রে ২ পতাকার স্থলে ৩ পতাকা টাঙিয়ে বিপদ সংকেতের বার্তা দেয়া হচ্ছে জনগণকে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জানমাল রক্ষায় রাতে বিভাগের প্রায় ৬ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিলেও সকালের দিকে আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় তারা অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন। এই মানুষগুলাকে ফের আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিপি’র বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ। সাইরেন বাজিয়ে এবং পতাকা টাঙিয়ে মহাবিপদ সংকেত জনগনের মাঝে প্রচার করে তাদের সচেতন করছে সিপিপি কর্মীরা।
এদিকে এখনও যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তারা পড়েছেন নানা মানবিক সমস্যায়। সুপেয় পানিবিহীন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর বাথরুম ও টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। রয়েছে উপযুক্ত ও শিশুখাদ্যের অভাব।
তবে আশ্রয় কেন্দ্রে বাড়ির মতো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে সকল আশ্রয় কেন্দ্রের সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। তিনি গবাদী পশু সহ অতি মূল্যবান সম্পদ নিয়ে ঝড় শুরুর আগেই সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেন। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া জনগণের বাড়ি বা সম্পদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। গত রাত ১২টাার দিকে বরগুনায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হৃদরোগে আকান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সের এক ব্যক্তির মৃতু হয়েছে।
সকল ৯টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের প্রায় ৬ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আরও কিছু মানুষকে তাদের গবাদি পশুসহ আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি বিভাগীয় কমিশনারের।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ণ্টিায় বরিশালে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হলেও ফাঁকে ফাঁকে সূর্য উকি দিচ্ছে। আকাশ মেঘলা এবং নদী প্রচুর উত্তাল রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ