ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনের পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কৃষি উপকরণ, কৃষি গবেষণা, নতুন জাত উদ্ভাবন ও কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহারসহ ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষিখাতের উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের আজ ১৩ খাতে বিশ্বে প্রথম ১০টি স্থানে রয়েছে। কাঁচা পাট রপ্তানি এবং ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। পাটপণ্য উৎপাদন, কাঠাল ও ছাগল উৎপাদনে দ্বিতীয়। মিঠা পানির মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে চতুর্থ। আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ। আম ও পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ।
আজ মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা: আগামীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে এ সব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনষ্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চ্যানেল আই’য়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খাঁন চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নেই কাজ করে গেছেন। কৃষিতে আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ২ শতাংশ সুদে ঋন প্রদান করে কৃষি শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবো। এতে দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। কৃষকরা সরাসরি লাভবান হবেন। এ বছরে আলুর উদবৃত্ত উৎপাদন হওয়ার কারনে আলু থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আজকের কৃষির যতটুকুই উন্নয়ন, তার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কৃষিতে ব্যাপক রূপান্তর ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরে যখন কোষাগার ছিলো শূন্য, কৃষিতে ছিলো নাজুক অবস্থা। সে সময়েই কৃষকের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনে গ্রাম বাংলার সাথে তার ছিলো গভীর সংযোগ। কৃষক সন্তানসহ বাঙালী জাতিকে তিনি গভীর ভালোবাসতেন। এছাড়া কৃষিতে বর্তমান সরকারের ব্যাপক প্রণোদনা উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে এবং এতে তরুনরাও উৎসাহিত হচ্ছে। তারমতে, স্বাধীনতার ৫ দশকে গর্ব করার মতো যা কিছু অর্জন তার সবখানেই কৃষি, কৃষক এবং কৃষকের সন্তানদের শতভাগ অবদান। সহায়ক শক্তি হিসেবে সরকারের নীতি-সহায়তা সাহস যুগিয়েছে কৃষককে। মাটি এবং মানুষের নেতা হয়ে ওঠার বহু আগেই কৃষকের জন্য অন্যরকম দরদ দেখিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে দায়িত্ব নিয়ে কৃষক বাঁচাতে একের পর এক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, অর্থনীতির ভগ্ন অবস্থা, কলকারখানায় উৎপাদনবন্ধ, বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার দেশে বঙ্গবন্ধুর নিকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য নীতিনির্ধারণ করা ও প্রায় ২০০ বছর ধরে অবহেলিত কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়ন এবং শিল্প ও বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপণ্য এবং পচনশীল কাঁচা সবজি, আলু, ফলমূল, ও বীজ জাতীয় ফসল দীর্ঘ সময় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আধুনিক হিমাগার স্থাপনে দেশ এখনো পিছিয়ে আছি। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এসব হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন