আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে ৮১টি সাংগঠনিক জেলায় এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। সাংগঠনিক জেলার অধীনে থানা পর্যায়ের পাশাপাশি ওয়ার্ড কমিটিগুলোও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হবে। নভেম্বরের মধ্যেই দল গুছিয়ে ডিসেম্বরে রাজপথে নামতে চায় দলটি। ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে মাঠ গরম করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির দফতর শাখা সূত্র জানায়, সাংগঠনিক ৮১টি জেলার মধ্যে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে ৩৮টিতে। আংশিক কমিটি আছে ১০ জেলায়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩১ জেলায়। এর মধ্যে দুই জেলার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে সব সাংগঠনিক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে চায় বিএনপি। একইভাবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চায় দলের হাইকমান্ড।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর আমাদের সারা দেশে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমও চলছে। পাশাপাশি আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমরা দলকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই। এ জন্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সারা দেশে সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে।’
জানা যায়, সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে গতকাল রাতেও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজও তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে হাইকমান্ডের। এরপর ১০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে চলতি মাসের মধ্যেই সব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য নেওয়া হবে। সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড। বিভাগের প্রায় সব জেলায় নিজেদের মধ্যেই অন্তঃকোন্দলে লিপ্ত নেতারা। এ কারণে সেই বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে। তিনি সব পক্ষের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। কিন্তু এখনো ওই বিভাগের জেলাগুলোতে কমিটি গঠনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। সার্বিক অগ্রগতি জানতেই মঙ্গল বা বুধবার বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একইভাবে ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় কমিটি না থাকায় হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত তিন বছরে ৩৮টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জেলা কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে পারেনি। জেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চিন্তিত দলটি। নির্ধারিত সময়ে প্রায় সব সাংগঠনিক জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে থানা-উপজেলার সব পর্যায়ের কমিটি দিতেও ব্যর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আবার যেসব জেলা তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ পড়েছে কেন্দ্রে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ বেশ কয়েকটিতে থানা-উপজেলা-পৌরসভার কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির দুজন সিনিয়র নেতা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলকে শক্তিশালী করার উদ্দেশে জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন। এ কমিটিকে তিন মাসের মেয়াদ দিলেও অনেক জেলা দুই বছরও পার করেছে। হামলা-মামলা, করোনাসহ নানা অজুহাতে কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছে। তারপরও কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। আর যারা কমিটি গঠনের কাজে হাত দিয়েছেন, অনেকের বিরুদ্ধে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব বিষয়েই অবগত রয়েছেন। তৃণমূলের কমিটি গঠনে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাউকে পদ দেওয়ার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও রয়েছে। জানা যায়, পাবনা জেলা কমিটি হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা চলছে। সেখানে একই অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরায়ও কমিটি গঠনের পর থেকে তেমন কোনো কর্মকান্ড নেই। তৃণমূলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দ্বন্দ্বে মাদারীপুরের কমিটি বহুদিন ধরে স্থগিত। লক্ষ্মীপুর ও ফরিদপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলায় বহুদিন কোনো কমিটি নেই। এ রকম হযবরল অবস্থা সব কমিটিতেই রয়েছে। বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও চলবে। বিএনপিতে নেতা-কর্মীর সংখ্যা অনেক। তাই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাও আছে। আগামী ৩১ নভেম্বরের মধ্যে সারা দেশের অসম্পূর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমি এরই মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সব জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। আশা করছি নভেম্বরের মধ্যে শুধু ময়মনসিংহই নয়, সারা দেশেই বিএনপির সাংগঠনিক জেলাগুলোর পুনর্গঠন কার্যক্রম শেষ হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় নেতাদের বৈঠক : সূত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পাওয়ার পর গত শনিবার স্থানীয় একটি হোটেলে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা পর্যায়ক্রমে নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা এবং ময়মনসিংহ মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অগ্রগতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। সভায় জেলা ও মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ১ নম্বর সহসভাপতি, ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক, সব সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সব যুগ্ম আহ্বায়ক উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ স্ব স্ব ইউনিটের সাংগঠনিক রিপোর্ট প্রদান করেন। সাংগঠনিক রিপোর্টের ওপর আলোচনার পর আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা, পৌর, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ইউনিটের সম্মেলন সমাপ্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও অংশ নেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, ওয়ারেছ আলী মামুন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ড. মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ আলম, ফখরউদ্দিন বাচ্চু, আখতারুল আলম ফারুক, ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানা, মাহবুবুল আলম, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, কাজী রানা, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক, মনিরুজ্জামান দুদু, বজলুর রহমান পাঠান, শাহ শিব্বির আহমেদ বুলু, মির্জা ফারহানা রহমান হোসনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, আহমেদ তাইয়্যেবুর রহমান হিরণ পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মতবিনিময় করেন। অ্যাডভোকেট নূরুল হকের নেতৃত্বে আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দও সাক্ষাৎ করে মতবিনিময় করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল