২৯ জুন, ২০২২ ২২:১৬

সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে কৃচ্ছ্রসাধনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সবাইকে সঞ্চয় বাড়াতে তাগিদ দেন তিনি।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার প্রধান এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। প্রত্যেককে নিজস্ব সঞ্চয় বাড়াতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। সবকিছু ঢালাওভাবে ব্যবহার করা যাবে না। সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধন করে কিছু সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমাতে হবে। সব ধরনের বিলাসদ্রব্য পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।

সবাইকে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধিতে আমাদের তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রথমত, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমাতে হবে। তৃতীয়ত, আমদানিকৃত বিলাসদ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, সবাইকে একটু দেশি পণ্য ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। কথায় কথায় দৌড়ে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। দেশে ভালো চিকিৎসা হবে। শত বাধা ও চাপের মুখে পড়লেও আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের এগোতে হচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা আমাদের অর্থনীতির উন্নয়ন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন সরকার প্রধান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে-বিদেশে, বাইরে সব জায়গায় তো বাধা পেতে হয়। এতো বাধা অতিক্রম করেও আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। এর কারণ আমাদের দেশের মানুষের আলাদা একটি শক্তি আছে। সেটা যদি তারা বুঝতে পারে, অনুধাবন করতে পারে- তখন শক্তিটা বোঝা যায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় আমদানিভিত্তিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর প্রাধান্য দিয়েই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। এবারের বাজেট জনগণের সহযোগিতায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো।

আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধির চাপ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামী অর্থবছর জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেবো না। ফলে আগামী অর্থবছর ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে। সে কারণে কার্যকর ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভর্তুকি ব্যয় সহনশীল মাত্রায় রাখা এবং আমদানির ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর আরেকটি ঢেউ এসেছে। চতুর্থ ঢেউ। করোনা ভাইরাস আমরা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। পাওয়ার যোগ্য সবাইকে টিকা দিয়েছি। জীবন জীবিকার সুরক্ষা যতটুকু দেওয়ার তার সবটুকুই আমরা সক্ষম হয়েছি। করোনা নতুনভাবে আবার দেখা দিয়েছে। সবাইকে বলবো স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে। করোনা মোকাবিলায় আমরা যে সাফল্য এনেছি সেটা ধরে রাখতে হবে।

করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিমারি আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তবে আমরা এই ক্ষতি সামলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সরকার কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যে কোনো ধরনের বাধা আসুক না কেন তা মোকাবিলা করতে পারবো। সেই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। করোনা অতিমারির সময়ে সরকারে যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে তা চলমান থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করতে পেরেছি। অতিমারি মোকাবিলা করেও ৫০ বিলিয়নের ক্লাবে প্রবেশ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা বিলাসবহুল পণ্য আমদানি যাতে কম হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেসব দ্রব্য খুব একটা প্রয়োজন নেই তা যেন আমদানি কম করেন সবাইকে সেই আহ্বান জানাবো। আমাদের দেশে এখন বন্যা চলছে। দক্ষিণাঞ্চলে ভাদ্র মাসের দিকে আসে। এই বন্যাও আমরা মোকাবিলা করতে পারবো। পদ্মা সেতু এই বন্যা মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতবিক্ষত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতির পিতা দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকার কাজ করে।

সবার জন্য পেনশন বিমা চালুর বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়েছি। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর সর্বজনীন পেনশন চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দিয়েছি। শিগগির সংসদে আইনটি উঠবে। আমরা তা কার্যকর করতে পারবো। তাতে যারা পেনশন পাবেন, তাদের জীবনটা সুরক্ষিত হবে।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর