বর্তমান সরকার একটি অবৈধ সরকারই নয়, তারা দখলদারি সরকারের ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এরা রাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়।
মঙ্গলবার গুলশান লেক শো'র হোটেলে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক কাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। আমাদের গণতন্ত্রকামী জাতিকে একটি ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ফেলে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে নাগরিককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দাস করে রাখা যায়; তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, এখন একটাই মত, এ সরকারকে সরাতে হবে। কারণ একে সরানোর কোন বিকল্প নেই। বিচার বিভাগের বিচার পাওয়া এখন একটা ভাগ্যের ব্যাপার। অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এরা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। সামনে নির্বাচনকে রেখে তারা নতুন নতুন আইন করছে। যাতে কেউ রুখে দাঁড়াতে না পারে, প্রতিবাদ না করতে পারে। নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে আইন দিয়ে ঘায়েল করে এরা পার হতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতেই চায় না। তারা বলে এটা বাতিল হয়েছে, কবর হয়েছে। আপনারা যখন এই ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তখন কি এটা লাইফে বা জীবন্ত ছিল? আমরাতো আপনাদের দাবি মেনে ছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। এর মাধ্যমে সকলের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। ডিজিটাল আইন নামে এই কালা কালুন বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৈষম্য কমিয়ে সাম্যের একটি দেশ গড়তে একসাথে আন্দোলনের ঝাপিয়ে করি। কারণ এ দানব সরকার আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। একে ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার ক্ষমতা থাকার জন্য সকল যন্ত্র ব্যবহার করছে। এর একটি যন্ত্র হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই ডিজিটাল আইন গণতন্ত্র পরিপন্থী। আজকে এরা মুক্তিযোদ্ধা চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আজ আমাদের কণ্ঠকে রোধ করতে তারা সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, আমেরিকা বলেছে বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশের মানবাধিকার থাকে না। তাই তারা মানবাধিকার না থাকায় র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই সরকার কিছু কালাকানুন দিয়ে আমাদের ওপর চাপিয়ে এরা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে। এইসব কালাকানুন দিয়ে তাদের দুরভিসন্ধি হলো সামনে আন্দোলনকে তারা বন্ধ করে দিবে। প্রধানমন্ত্রীও জানেন তিনি দেশের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন। তাই তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে এরকম কথা বলতে পারেন। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী ফ্যাস্টিট সরকারকে বিতাড়িত করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় ও সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ এর পরিচানায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাজাহান ওমর, বরকত উল্লা বুলু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, বিজন কান্তি সরকার, অ্যাডভোকেট সুকমল বড়ুয়া, ক্যাপ্টেন সৈয়দ সুজা উদ্দিন প্রমুখ।
অন্য দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত