নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীকে প্রধান আসামি করে রফিকুল ইসলাম রফিক ওরফে আণ্ডা রফিকসহ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে। আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তিকে পিস্তল দিয়ে গুলি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে ভুক্তভোগী আইয়ুব আলী বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জোবায়ের হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আইয়ুব আলী চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকার সেকেন্দার আলীর ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এই মামলায় ৫৯ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়াও তাঁর ছেলে গাজী গ্রুপের পরিচালক গোলাম মর্তুজা পাপ্পা, রফিকুল ইসলাম রফিক, মিজানুর রহমান মিজান, নাফিজ ইকবাল, চনপাড়ার ইউপি সদস্য শমসের আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমন হাসান খোকন, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনও আসামি রয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকার মানিক মিয়ার বাড়ির সামনে পৌঁছলে আসামিরা আইয়ুব আলীর পথরোধ করে। আইয়ুব আলীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেটে পোঁচ দিয়ে গুরুতর আহত করলে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। একপর্যায়ে আসামিদের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করে পেট এবং উভয় পা জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে রাজধানীর কাকরাইল এরেরা হসপিটালে ভর্তি করে। পরে বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নেন।
এর আগে, গত রবিবার ভোরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এরপর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই দিন (গত রবিবার) নুরুন্নাহার বেগম নামের এক নারী বাদী হয়ে সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার পিএস এমদাদুল হকসহ ১৮ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জের চনপাড়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়-, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ওরফে আণ্ডা রফিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ এবং জাল-জালিয়াতির অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও প্রশাসনের চোখের সামনেই সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সার্বক্ষণিক সহযোগী হয়ে তিনি চলাফেরা করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, গাজী ও আণ্ডা রফিক মিলে রূপগঞ্জে অপরাধের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই গাজী পরিবার ও আণ্ডা রফিকের সরাসরি ছত্রচ্ছায়ায় রূপগঞ্জে দখলদারি, বিভিন্ন সময়ে হত্যা ও লুটপাটের রাজত্ব চলে আসছিল। এ অবস্থা থেকে এলাকার নিরীহ মানুষ পরিত্রাণ চায়।
রূপগঞ্জকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন গাজী ও রফিক
স্থানীয়রা আরো জানান, নিজেদের দখলদারি টিকিয়ে রাখার জন্য অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসীদের লালন-পালন থেকে শুরু করে সব করছেন তারা। এলাকায় মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, গুম-খুন, জবরদখল- সব কিছুতে আছে তাদের নাম। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই ভাগ্যে জোটে মামলা, হামলা আর শারীরিক নির্যাতন। জমি দখল ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে গুম-খুনের মতো স্পর্শকাতর একাধিক অভিযোগ আছে তাঁদের নামে। রূপগঞ্জে গত কয়েক বছরে তারা এতটাই অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছেন যে বিভিন্ন সময় তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অনেক পরিবার।
ফতুল্লায় ইয়াছিন হত্যা মামলায় আসামি রফিকও
ফতুল্লায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইয়াসিন হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ২২০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ইয়াসিনের (১৮) ভাই মো. শীপন বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, বিসিবির পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু ও রফিক ওরফে আণ্ডা রফিক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. নূরে আজম মিয়া।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই ফতুল্লার দেলপাড়া এসবি গার্মেন্টসের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আসামিরা গুলি করলে অয়ন ওসমানের ছোড়া গুলিতে মো. ইয়াসিন মিয়া (১৮) বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ