অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ সরকারি সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মো. মোখলেস উর রহমান।
সম্পদের হিসাব কীভাবে জমা দিতে হবে সেজন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিবরণী জমা না দিলে খবর আছে।
এর আগে গতকাল রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশের কথা জানান।
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী কীভাবে নেবেন, আইন করতে হবে কিনা, কবে থেকে দিতে হবে, সবাই এর আওতায় পড়বে কিনা-এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা সবাই সরকারি কর্মচারী। আমাদের গড়ে ১৫ লাখ কর্মচারী আছে। আগে আমরা মনে করতাম শুধু কর্মকর্তাদের দিতে হবে যারা ট্যাক্স পে-বল। কিন্তু দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অথবা ড্রাইভার চারশ’ কোটি টাকা অথবা নয় কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য এটাকে আপডেটেড ওয়েতে, যাতে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে পারে-এই কাজটা শুরু করেছি। এটার মূল মেসেজটা গতকাল দেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, আপনাদের অনেকের কাছে প্রশ্ন ছিল-কবে, কোথায় এবং কীভাবে দেবে? দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে এনবিআরের একজন প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন। এই কমিটিকে আমরা ন্যূনতম একটা সময় দেব। তারা একটা ফরম তৈরি করবে। অনেকে বলেন আমি তো ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিই, এটা দিলেই তো হয়ে যায়। ট্যাক্সেবল ইনকাম তো সবার না, ড্রাইভার-পিয়নের তো ট্যাক্সেবল ইনকাম না। তার কি ই-টিন আছে। অথচ তার ইনকাম কোথায় কী হয়ে গেছে!
তিনি আরও সচিব বলেন, অভ্যুত্থানের পর, দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর যে সরকার তারা বলেছে যে জিরো টলারেন্স। শুধু ব্যাংক বিবরণী না, এর সাথে জমি-জমা, সঞ্চয়পত্র, সম্পদের বিবরণের তালিকা কমিটিকে দিয়ে দেব। সম্পদের বিবরণী জমা দিলে আমি মনে করি পরিবারগুলো সেইভ হবে। আজকে যে ম্যাসাকার সবচেয়ে অ্যাফেক্টডেট কে হয়েছে, যে ভোগ করেছে তার পরিবার।
সিনিয়র সচিব বলেন, (হিসাব বিবরণীর) ফরমটা ইউনিফাইড হবে। এটা করলে দুর্নীতি কমে আসবে। এটা অনেক বড় উদ্যোগ। এটা কাজ করবে।
কবে থেকে কার্যক্রম শুরু হবে-জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা ফরমেটটা যদি চাই সেটা সাত দিনের বেশি হবে না। আর কে কোথায়, কবে দেবে-এটা সিদ্ধান্ত হবে স্পেসিফিক ফোকাল পয়েন্টের কাছে জমা দিতে। সাত দিন পর আরও যদি সাত দিন সময় নেই তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে এটি ফাংশনাল হবে। তখন আমরা বলে দেব কবে জমা দিতে হবে। আর এটা বছরে একবার জমা দিতে হবে। ফরমটা বাংলায় করে দেব। এক পাতার কাগজে করবো। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বাইরে কী থাকবে তা উল্লেখ করে দেব।
কেউ যদি জমা না দেয় তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন-প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব সারা দেশের। আমরা ১৫ লাখের কথা বলছি। আমরা বলে দেব জমা না দিলে কী হবে, দণ্ড কোথায় হবে, কীভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বিবরণী জমা না দিলে খবর আছে, সোজা কথা।
খবরটা কী-এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খবরটা…আমরা যখন চিঠি দেব তখন বলে দেব।
শাস্তিটা কী হবে-প্রশ্নে তিনি বলেন, যা করার, যেখানে যা করার আমরা করবো। বিধি মোতাবেক কাজ করবো।
উপদেষ্টাদেরও সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে-প্রশ্নে সিনিয়র সচিব বলেন, এ টু জেড। আমাকে দিয়ে শুরু হবে। কিন্তু আমার যে সম্পদ, আমার একটা লোনের গাড়ি ছাড়া কিছু নাই। যেদিন চিঠি ইস্যু করবো সেদিন দেব। যারা পাবলিক অফিস হোল্ড করে মানে বেতন খায় সবাই।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত