পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ। তবে তিনি দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দিল্লি ও ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে ক্ষমতা পালাবদলের ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এ দুটির একটিকেও পুরোপুরি মানছি না। আমার মনে হয়, কোনো এক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। এখন যদি সেই সম্পর্ক উন্নত হয়, তবে আমাদের সবাইকে খুশি হওয়া উচিত। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে শত্রুতা করে কোনো লাভ নেই।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যদি কেউ মনে করে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে, তবে তা দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টায় মিটিয়ে নেওয়া উচিত। সম্পর্ক মানুষকেন্দ্রিক হতে হবে এবং এমনভাবে গড়ে উঠতে হবে যেন জনগণও তা অনুভব করে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সোনালি অধ্যায় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সোনালি অধ্যায় ছিল দুই সরকারের মাঝে। আমরা চাই, সুসম্পর্ক জনসাধারণের মধ্যেও বিরাজ করুক, মানুষ তা অনুভব করুক। মানুষের মাঝে কিছু ক্ষোভ ছিল, যা দুই পক্ষের সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশমন করা সম্ভব।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্ধারণ করা যাবে আরও পরে। আমরা একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাই এখনই এ বিষয়ে বিচার করা সম্ভব নয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার কিছু প্রতিবেদন মিথ্যা ও বাড়াবাড়ি ছিল। বিপ্লবের পর কিছু বিশৃঙ্খলা থাকতেই পারে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া একে নিয়ে অতিরঞ্জিত করেছে। নিরপেক্ষ বিশ্ব মিডিয়া কিন্তু এই লাইনটি গ্রহণ করেনি। আমি মনে করি, আমরা সেই পর্যায় পার করে এসেছি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো দিল্লিতে আছেন কি না বা অন্য কোথাও চলে গেলে জানতে পারবেন কিনা, এ প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন। যদি তিনি অন্য কোথাও চলে যান, সেটি আপনারা নিজেই জানতে পারবেন। পত্রপত্রিকায় তা জানা যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কিছুটা টানাপোড়েন চলছিল। এটি স্বীকার করাই ভালো। তবে বর্তমান সরকারের এজেন্ডা ও ছাত্র-জনতার এজেন্ডার সঙ্গে এসব ইস্যু সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। চূড়ান্তভাবে কোনো দ্বন্দ্বের সুযোগ আমি দেখছি না।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল