বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর পুত্র কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি সিআইডি হেফাজতে থাকা অবস্থায়ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। একসময় ক্ষমতার দাপটে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। তাঁর সেই স্বভাব এখনো রয়েছে। আগে তাঁর নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
বিশেষ করে বহু নারী তাঁর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেই ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই অভিযোগকারীদের খুঁজছে জানিয়ে গতকাল সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আফ্রিদির কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। এখনো তাঁর অপকর্মের তদন্ত চলছে।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে এখনো অনেকে বহু অভিযোগ করছেন। সেসব তথ্য আমলে নিয়ে তাঁরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন। সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও আফ্রিদি অনেক অপ্রত্যাশিত আচরণ করেন জানিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, সিআইডি হেফাজতে থাকাকালে গভীর রাতে তৌহিদ আফ্রিদির আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। রাতে অনেকটা নির্ঘুম থাকতেন তিনি।
ভোরের দিকে ঘুমানোর সময় আগের অনেক অপকর্মের স্বপ্ন দেখে চিৎকার করতেন। কারাগারে পাঠানোর আগ পর্যন্ত তাঁর এমন অনেক আচরণ ছিল জানিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আফ্রিদি এখন ঘুমের মধ্যেও আগের অপকর্মের স্বপ্ন দেখেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে এখনো তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাচ্ছেন তাঁরা। আর এসব অভিযোগকারীর সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করছেন। সিআইডি সূত্র বলছে, আফ্রিদির বিরুদ্ধে তাঁর একসময়ের বহু কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফেসবুকে অনেক অভিযোগ করছে।
তাদের ওপর নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর তথ্যও তারা দিচ্ছেন। এদের একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের নাম সায়েম। তিনি একটি ভিডিও বার্তায় আফ্রিদিকে নিয়ে আড়াই বছর আগের ঘটনা ফাঁস করেছেন। সায়েম তাঁর পেজে ১২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন। তাঁর এই অভিযোগের সত্যতা খুঁজছেন সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ওই ভিডিওতে সায়েম বলেন, আড়াই বছর আগে তৌহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে তিনি একটি ভিডিও বানান। ওই ভিডিওতে তিনি কিছু সত্য তুলে ধরেন। কিন্তু তা দেখে তৌহিদ আফ্রিদি মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে সায়েমকে ডিবি অফিসে নিয়ে মুচলেকা দিয়ে লিখিত কাগজ জমা দিতে হয়। সেই মুচলেকায় তাঁকে বাধ্য করা হয়, যেন আর কখনো এ রকম ভিডিও তিনি না বানান। সিআইডি এই বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে।
সায়েম দাবি করেন, ডিবি অফিসে যাওয়ার পর তাঁর হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে এলোপাতাড়ি লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সিআইডি বলছে, আফ্রিদির আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কনটেন্ট ক্রিয়েটর তানভীর রাহীর সঙ্গেও তারা যোগাযোগের চেষ্টা করছে। রাহী দাবি করেন, তিনিসহ দেশের অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছে।
সিআইডি বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেকেই আফ্রিদির বিরোধিতা করেছিল। তাদের অনেককে মারধর করেন আফ্রিদি। এভাবে বিভিন্ন সময় তৌহিদ আফ্রিদি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে ফোন করাতেন। তদন্তে এসবও গুরুত্ব পাচ্ছে জানিয়ে গতকাল সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, আগে আফ্রিদির বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান বলেন, গ্রেপ্তার তৌহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও আইম্যাক ডিভাইসের ফরেনসিক প্রতিবেদন এখনো পাননি তাঁরা। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে যখন যে অভিযোগ পাচ্ছেন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাঁরা।
সিআইডি বলছে, তৌহিদ আফ্রিদি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি। মামলায় তৌহিদ আফ্রিদি এবং তাঁর বাবা মাই টিভির মালিক নাসির উদ্দিন সাথীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এজাহারনামীয় ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ছিলেন সব অপকর্মের একজন ধুরন্ধর প্রতারক, এই তথ্য জানিয়ে সিআইডি বলেছে, অপরাধজগতে অন্যতম শক্তিশালী চক্র রয়েছে তৌহিদ আফ্রিদির। ভুক্তভোগীরা সেই চক্রের নাম দিয়েছে ‘গিভ অ্যান্ড টেক সিন্ডিকেট’। যারাই সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখাতো তাদের দেওয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি, করা হতো গুম, ঠুকে দেওয়া হতো তাদের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা।