বিশ্বের এক নম্বর হন্তারক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে হৃদরোগকে। প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন বা প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ মারা যাচ্ছেন এ রোগে। হার্ট অ্যাটাক দানবটি যখন আমাদের ছোট্ট হার্টকে অ্যাটাক করে তখন হার্ট অ্যাটাক হয়ে অনেকেই মারা যান। যদি আমরা আমাদের হার্টকে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করতে পারি তখন হার্ট অ্যাটাক দানব নিজেই ধরাশায়ী হয়ে পরাস্ত হবে এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে আমরা রক্ষা পাব। শক্তিশালী জীবনের জন্য দরকার শক্তিশালী হার্ট আর শক্তিশালী হার্টের জন্য প্রয়োজন কিছু ব্যতিক্রম চিকিৎসা পদ্ধতি। এসব পদ্ধতির মধ্যে আছে ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, শারীরিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা বিষেশত যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন ও নিউরোবিক জিম ও আকুপ্রেসার। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দৈহিক ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হলেও হার্টকে শক্তিশালী রাখা যায় মহাজাগতিক শক্তি বা কসমিক অ্যানার্জির মাধ্যমে।
এ চিকিৎসা হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীনতম প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চর্য সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি দুটি। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম। রোগীর বয়স এবং রোগের ধরন ও তার বর্তমান অবস্থার ওপরই নির্ভর করে তার প্রতিদিনের খাদ্যগ্রহণ। আর ব্যায়ামের ব্যাপারটি বিবিধ। তার আগে মন নিয়ন্ত্রণের জন্য চাই সঠিক উপায়ে মেডিটেশন। মানসিক চাপই মানুষের অসুখ ও অশান্তির মূল কারণ। মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাজাগতিক শক্তি থেকে জ্যোতি বা প্রাণরস আহরণের কথাও বলা হয়ে থাকে। এসব অর্জনের কাজটি কিন্তু অত সহজ নয়। তার জন্য নিয়মিত সময় দিতে হয়, চর্চা করতে হয় সঠিক নিয়ম মেনে। যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন ও নিউরোবিক জিম— প্রত্যেকটিরই নিজস্ব রীতিনীতি আছে। হলিস্টিক চিকিৎসায় সোল-মাইন্ড-বডি বা আত্ম-মন-দেহ সব কিছুর ওপরেই লক্ষ্য রেখে প্রোগ্রাম দেওয়া হয়। সংক্ষেপে বলতে পারি এসব চিকিৎসা ইতিমধ্যে দেশে অনেকটা আস্থা অর্জন করেছে। বিগত ১০ বছর ধরে দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে হাজার হাজার হৃদরোগীর জীবনে সুবাতাস বয়ে এনেছে। একবার কষ্ট করে পরিবর্তনের ধারায় এলে পরে আর সেটা কষ্টসাধ্য হবে না। হার্টের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে দেশের শতকরা ৯০ জনের পক্ষেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া অধিকাংশ মানুষই থাকেন গ্রামে। সর্বত্র যোগাযোগের ব্যবস্থাও উন্নত নয়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তাই ‘হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগেই অ্যাটাক করুন হার্ট অ্যাটাককেই।’ অর্থাৎ হার্টকে রাখুন সুস্থ ও শক্তিশালী। একটি কথা সর্বদা মনে রাখতে হবে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস, হলিস্টিক হেলথ
কেয়ার সেন্টার, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।