শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

করোনার নমুনা পরীক্ষার তীব্র সংকটেও কাজে আসছে না জিন-এক্সপার্ট মেশিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য যখন চরম ভোগান্তিতে রাজশাহীর মানুষ। তখনো রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ‘জিন-এক্সপার্ট’ মেশিনটি তেমন কাজে আসছে না। মেশিনটি দিয়ে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের পরীক্ষা সম্ভব, সেখানে ৫/৬ জন টিবি রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাড়তি সুবিধা হিসেবে অটোমেটিক এই মেশিনে এক ঘণ্টার মধ্যেই করোনার রিপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজশাহীতে বর্তমানে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) একটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বাড়তি চাপের কারণে এখন আর দিনের রিপোর্ট দিনে পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয় অন্তত পরের দিনের জন্য। রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত যক্ষ্মা শনাক্ত করার যন্ত্র ‘জিন-এক্সপার্ট’ দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করা সম্ভব। পিসিআর ল্যাবের বিকল্প এই পদ্ধতি রিয়েল টাইম পিসিআর হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করতে আট ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে জিন-এক্সপার্ট মেশিনে নমুনা প্রক্রিয়াকরণ করতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে এবং ৪৫ মিনিটেই ফল পাওয়া যায়।

শুধু তাই নয়, এই মেশিনে পজিটিভ রোগীর ফলাফল ৩০ মিনিটে পাওয়া সম্ভব। পদ্ধতিতে ভিটিএম টিউব থেকে নমুনা সরাসরি কার্টিজে দেওয়া হয়। এক ধাপে নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং সরাসরি কম্পিউটার থেকে ফলাফল পাওয়া যায়। এ পরীক্ষা ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নে করোনাভাইরাস পজিটিভ ও নেগেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ সাফল্য পেয়েছে। 

তুলনামূলক কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক পরীক্ষার জন্য জিন-এক্সপার্ট মেশিনটি খুবই কার্যকর। তবে রাজশাহীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের দুটি মেশিনই এই করোনাকালে তেমন কাজে আসছে না। একটি মেশিন ৪ মডিউলের ও একটি ১৬ মডিউলের। এগুলোতে প্রতি ঘণ্টায় ২০টি করে পরীক্ষা করতে সক্ষম। দিনে ৫ বারে মোট ১০০টি পরীক্ষা করতে সক্ষম এগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই মেশিনে জানুয়ারি মাস থেকে নির্ধারিত কিছু মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এখানে। এগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশ করোনা পজিটিভ এসেছে। মূলত এখানকার রোগী, চিকিৎসক এবং তাদের স্বজনদের করোনা পরীক্ষায় এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, এখন রাজশাহীর মধ্যে শুধু মেডিকেল কলেজেই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের এখানে প্রতিদিন দুই শিফটের জায়গায় চার শিফট কাজ করেও প্রতিদিনের নমুনা প্রতিদিন পরীক্ষা করে শেষ করতে পারছি না। প্রতিদিন এখানে সর্বোচ্চ ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। অথচ জমা হচ্ছে চারশর উপরে। ডা. নওশাদ বলেন, এই মুহূর্তে রোগ নির্ণয় করাটাই জরুরি। কারণ রোগ নির্ণয় না হলে চিকিৎসা করানো যাবে না। যত বেশি পরীক্ষা হবে ততই ভালো। এ অবস্থায় যে যে সুযোগ আছে কাজে লাগানো উচিত।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, অনেক জায়গায় জিন-এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি আমাদের আয়ত্তে না।  এটি বক্ষব্যাধি ব্যবহার করে।

রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপার ডা. সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে টিবি রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া, আমাদের স্টাফদেরও পরীক্ষা করানো হয় এখানে। কোনো কোনো দিন ৪ বা ৫টা টেস্ট হয় আবার কোনোদিন ১৪ থেকে ১৫টি করোনা পরীক্ষা হয়। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার সুযোগ নেই, কারণ এখানে আমাদের রোগী ভর্তি থাকে অনেক। তাদের অবস্থাও অনেক জটিল থাকে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর