ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে গম আমদানির সিদ্ধান্ত এবং তিন গুণ বাড়তি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থী। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) গম ক্রয়ে বেআইনিভাবে বেসরকারি তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণখাতে ক্রয় আইন অনুযায়ী, সরকারি পর্যায়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষ থাকবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পাঁচ লাখ টন গম কেনায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে যুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে পড়তির দিকে থাকলেও ওই পক্ষের মাধ্যমে বেশি দামে গম কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডের কূপ খননের জন্য তিন গুণ বেশি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা কাকতালীয় কোনো বিষয় নয়, বরং উভয় ক্ষেত্রেই একটি অসাধু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী চক্রকে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈতিক ও অতিমুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া মাত্র এক লাখ টন গম চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গকে পাঁচ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ দেওয়ায় হতবাক হয়েছি। অথচ, গমের বাড়তি দামের কারণে সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম যখন কমছে, তখন বাড়তি দামে একই প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীসহ একশ্রেণির সুবিধাভোগী চক্রের যোগসাজশ আছে তা সহজেই বোধগম্য। বাড়তি দামে গম কেনার সঙ্গে জড়িত ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি’ প্রতিষ্ঠানটি তিন গুণ বেশি মূল্যে বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে গ্যাসকূপ খননের চুক্তিরও সুবিধাভোগী। সরকারি আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং বাপেক্সের সক্ষমতাকে উপেক্ষা করে কেন তিন গুণ বেশি মূল্যে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করা হলো, তা জনস্বার্থে খতিয়ে দেখা জরুরি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যোগসাজশের দুর্নীতির এই যুগলবন্দির ফলে যারা প্রত্যক্ষ লাভবান এবং যারা এর পরোক্ষ সুবিধাভোগী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।