চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীর সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত দুজনের শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে আহত মামুন মিয়াকে চিকিৎসক ধরে ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করেছেন এবং অপরজন ইমতিয়াজ এখন হাত-পা নাড়াচ্ছেন। মামুনের খুলে নেওয়া মাথার খুলি এখনো প্রতিস্থাপন করা হয়নি। তবে ‘মামুন সুস্থ হয়েছে’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা হয়।
জানা যায়, চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। এর মধ্যে মামুনের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই পার্কভিউ হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয় এবং মাথার খুলি খুলে ফ্রিজে রাখা হয়।
এটা প্রতিস্থাপন করতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। অপারেশনের পর কয়েকদিন আইসিইউতে ছিল। গত বুধবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। গত শনিবার চিকিৎসক তাকে কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটানোর চেষ্টাও করেন। তবে হাঁটানোর সময় কেউ একজন ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। এনিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়।
মামুনের ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো হাঁটার মতো সুস্থ হয়নি। কথা বলছে ইশারায়। কাউকে চিনতেও পারছে না। মাথায় ব্যথাও আছে। ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তখন আমি ছিলাম না। বাইরে থেকে কারা এসে ছবি তুলছে। তবে আমি মনে করি, চিকিৎসকরাই বিষয়টা ভালো জানবেন।
পার্কভিউ হাসপাতালের নিউরো সার্জন ডা. মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, অপারেশনের কয়েকদিন পর চিকিৎসার রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে আমার কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটানোর চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে তাকে হাঁটাব এবং নিজে উঠে বসানোর চেষ্টা করব। তবে আমরা হাঁটানোর সময় অন্য একজন ছবি তুলে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়। তারা এটা কেন করছে আমি জানি না।
পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ টি এম রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম মতে চিকিৎসক অপারেশনের পর রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে রোগীকে আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করানোর চেষ্টা করেন। গত শনিবার এটিই করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি থাকা ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তার জ্ঞান একটু একটু করে ফিরছে। গতকাল লাইফসাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। গতকাল দুপুরে তৃতীয়বারের মতো বোর্ড বসেছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে তার চিকিৎসা চলছে।
নিউরো সার্জন ডা. মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, ইমতিয়াজের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। হাত-পা নাড়াচ্ছে। নাম বলতে পারছে। তার জ্ঞানের লেভেল এখন ১৫। এটাই স্বস্তির। আশা করি, দ্রুতই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট রাতে এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চবির অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের চবির ৮টা বাস ও ৯টা অ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালসহ নগরের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।