পহেলা বৈশাখ বরণ নিয়ে সারা বাংলাদেশ উত্সবে মাতোয়ারা হলেও ব্রিটেনের নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিরা জানে না বৈশাখ কি জিনিস! তাদের কাছে বৈশাখ হচ্ছে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য বৈশাখী মেলায় কনসার্ট আর ঘুরোঘুরি।
রাফিউর ক্বাফী নামের ১৯ বছরের এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণের কাছে বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ কোনো নতুন মাত্রা নিয়ে আসে না। সে কখনো তার বাবা-মায়ের কাছে এ বিষয়ে শুনেনিও। লন্ডনে অন্যতম বড় উত্সব বৈশাখী মেলা যেটি মূলত মে মাসের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠিত হয় সেটাকে সে একটি ডে ইভেন্ট মনে করে! কিসের জন্য এই মেলার আয়োজন হয় সেটাও সে জানে না। ক্বাফীর মতোই এখানে জন্ম ও বেড়ে উঠাদের কাছে বাংলা সংস্কৃতি বা উত্সব কোনো গুর’ত্ব বয়ে আনে না।
সাফিয়া নামের ১৭ বছরের কিশোরীর কাছেও পহেলা বৈশাখ অচেনা তবে চেনা হচ্ছে মে মাসে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা। এই মেলায় সারাদিন ঘুরাঘুরি, রাইড চড়াটাই ভালো লাগে তার। এবারও সে বৈশাখী মেলায় যাবে রাইড চড়ার জন্য আর বাংলাদেশি খাবারের জন্য।
ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নাট্যব্যক্তিত্ব ও নির্মাতা ফজলুল কবীর তুহিন বলেন, ‘এখানে জন্ম ও বেড়ে উঠাদের মধ্যে যে বাংলা সংস্কৃতি একেবারে নেই সেটা বলা যাবে না। তবে সেটা কোনো শতকরা হিসাবে ফেলা যাবে না। নিজেদের বাচ্চাদের নিজের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় না করিয়ে দেয়াটা বাবা-মায়েদের ব্যর্থতা।'
বিশিষ্ট লেখক ও নাট্যকার মাসুম রেজা বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘দুটি কারণে এখানে বাংলা সংস্কৃতির ভিত্তিটা হয়নি। এখানে একটি ধারণা আছে যে এটা বিধর্মীদের দেশ এবং এখানে ইসলামবিরোধী কাজ অনেক বেশী হয়। ফলে ধর্মচর্চার প্রতি অনুরাগী হয়ে আমরা আমাদের মূল সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠানকে অনৈসলামিক কাজ বলে এড়িয়ে যাই। আরো একটি কারণ হচ্ছে ১৯৭১ সালের পরে অনেক যুদ্ধাপরাধী এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। এরা এখানে বিভিন্ন মসজিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের সংস্কৃতির অপব্যাখ্যা দিয়েছে। এসব কারণে আমরা মূল সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছি।’
বিডি-প্রতিদিন/ ১৩ এপ্রিল ২০১৫/শরীফ