‘শান্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ঘটছে না। দেশের মানুষও আগ্রহী হচ্ছেন না বড় বড় প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করতে। এ কারণেই বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। এ নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোন কারণ নেই’ মন্তব্য জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের। ‘প্রবাসীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োজিত অর্থের নিরাপত্তাহীনতার আশংকায়’ অভিযোগ রবের।
সোমবার রাতে (২৭ জুলাই) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ‘প্রবাসী বাঙালি সমাজ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় রব আরো বলেন, ‘একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হলেই সেখানে একনায়কতন্ত্র চালু হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে সংসদীয় স্বেরতন্ত্র বিরাজ করছে। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তবে উন্নয়নের গতি আরো ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেতো যদি জনগণকে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক বলে মনে করা হতো’ এমন অভিমত পোষণ করেছেন জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রব।
রব বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ৪৪ বছরে যতটা উন্নয়ন ঘটেছে বা ঘটছে তার কৃতিত্ব সরকারের নয়, পুরো কৃতিত্ব উদ্যমী মানুষ আর প্রাইভেট সেক্টরের।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রবাসে রাজনীতি অথবা আন্দোলন করে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন করা যাবে না। সেটি কখনোই সম্ভব নয়। তবে দেশের উন্নতি চাইলে, প্রবাসীদের উচিত হবে আমেরিকার ভালো জিনিসগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ প্রবাসের অভিজ্ঞতা প্রিয় মাতৃভূমি স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে।’
‘বাংলাদেশ থেকে রাজনীতিকরা প্রবাসে এসে সুযোগ পেলেই নেতিবাচক তথ্য, হতাশাব্যঞ্জক কথা বলেন। এটি ঠিক নয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে এবং বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র-এ সত্য উল্লেখ করা উচিত। বাংলাদেশের এসব সম্ভাবনা বাস্তবায়িত করবে পরবর্তী প্রজন্ম-এ প্রত্যাশা থাকা বাঞ্ছনীয়’-বলেন রব।
আ স ম রব আরো উল্লেখ করেন, ‘এটি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বা রাজনীতি করি, তারা কখনোই জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করি না। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে বড় একটি দুর্ভাগ্যের ঘটনা।’ ‘আমার জন্ম হয়নি মন্ত্রী, এমপি অথবা রাজনৈতিক দলের সভাপতি হবার জন্যে, আমার জন্ম হয়েছে সারাবিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের সাহসী সৈনিক হবার জন্যে। এ চেতনায় যেন জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাটিয়ে যেতে পারি-সে জন্যে দোয়া করবেন’ বলেন রব। কেন তিনি এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছিলেন, কেন শেখ হাসিনার ঐক্যমতের সরকারের মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেছিলেন, কেনই বা উপজেলা সিস্টেমের প্রবক্তা হয়েছিলেন-ইত্যাদি প্রসঙ্গের বিস্তারিত ব্যাখা দেন। রব বলেন, ‘আমি সব সময় বাংলাদেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করার জন্যে কাজ করেছি। এখনও সোচ্চার রয়েছি। আমার বাকিটা জীবন যেন মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রাখতে পারি।’
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আ স ম রবের স্ত্রী তানিয়া রব, রবের রাজনৈতিক সচিব শহীদুল্লাহ ফারায়জি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী, সাবেক এমপি লিয়াকত আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুজিবর রহমান এডভোকেট, জাসদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য মাসুম মোহাম্মদ মহসিন, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ড. সব্যসাচী দস্তিদার, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, হাসান চৌধুরী, মইনুদ্দিন নাসের। সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র জেএসডির সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন এবং পরিচালনায় ছিলেন শামসুদ্দিন আহমেদ।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা