মীর ইসলাম (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে অনলাইনে হোয়াইট হাউজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বোমা হামলা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, হত্যাচেষ্টা ইত্যাদি হুমকির ভুয়া তথ্য প্রদানের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল জজ র্যান্ডোলফ ডি মোস তার বিরুদ্ধে গত সোমবার এ রায় প্রদান করেন। ইউএস এটর্নী চ্যানিং ডি ফিলিপস এ তথ্য জানান।
নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের অধিবাসী মীর ইসলাম ইন্টারনেট সুবিধায় কখনো আরিজোনা, কখনো ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউইয়র্ক ইত্যাদি স্থানে অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে ৯১১ এ ফোন করেছেন। গত বছরের ২৩ এপ্রিল হোয়াইট হাউজে বোমা হামলার হুমকি দেন মীর ইসলাম।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল ম্যারিল্যান্ডের মন্টগোমারি কাউন্টির পুলিশকে জানানো হয় যে, বেথেস্ডাস্থ কংগ্রেসনাল কান্ট্রি ক্লাবের সন্নিকটে সিএনএন হোস্ট উল্ফের বাসায় এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ৯১১ এ ফোন করে জানানো হয় যে, ন্যাশনাল রাইফেলস এসোসিয়েশনের একটি প্রকল্পে নেতৃত্বদানরত ডব্লিউ এল নাকি তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন।
একই বছরের ২২ মার্চ ৯১১ এ ফোন করে মীর ইসলাম অবহিত করেন যে, ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনা ক্যাম্পাসে বোমা ফুটেছে এবং গোলাগুলি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে এক বন্দুকধারী অবস্থান নিয়েছে। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে ৫০টি ফোন করে বিব্রত করা হয় এফবিআই, সিআইএ এবং পুলিশ প্রশাসনকে। কোন কোন স্থানে ‘সোয়াট’ টিমকেও অভিযান চালাতে হয়েছে। মিশিগানের কংগ্রেসম্যানের বাসায় সন্ত্রাসী হামলা, ন্যাশনাল রাইফেল্স এসোসিয়েশনের প্রধান ওয়াইন লা পিয়েরের বাসায়, আরিজোনা ইউনিভার্সিটিতে বন্দুক হামলার কথা জানায় পুলিশকে। শুধু তাই নয়, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড নাজি’ নামক একটি গ্রæপের পরিচয়ে সে অনেক মানুষের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর চুরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেন। মীর ইসলামের এমন অপকর্মের সহযোগী হিসেবে আরো ৪ যুবককে গ্রেফতার করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, ভার্জিনিয়ার ফ্রেডারিকবার্গস এবং ফিনল্যান্ড থেকে।
৬ বছর বয়সে মা-বাবার সাথে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মীর ইসলাম। গত বছরের জুলাই মাসে গ্রেফতারের পর থেকেই তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ঐ বছরের ৬ জুলাই তিনি ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নিজের দোষ স্বীকার করেন। অন্যের গোপন তথ্য চুরি করা, অনলাইনের অপব্যবহার-প্রতারণা, অন্যের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের অপব্যবহার, কম্প্যুটার প্রতারণা, এফবিআইসহ কেন্দ্রীয় সরকারের লোকজনকে অপদস্ত করা, আন্ত-স্টেট হুমকি-ধমকি প্রদানসহ গুরুতর কয়েকটি অপরাধে এই দোষ স্বীকার করেছিলেন। দীর্ঘ এক বছর পর তাকে গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল জজ র্যান্ডোলফ ডি মোস ২৪ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ দণ্ডভোগের পর তাকে আরও ৩ বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতের এ রায়ের বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস এটর্নি চ্যানিং ডি ফিলিপস, আরিজোনা রাজ্যের ইউএস এটর্নী জন এস লিয়োনার্দে এবং এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের সহকারি পরিচালক পোল এম এব্যাটে।
মাননীয় আদালতে মীর ইসলামের আইনজীবী দাবি করেন যে, তার মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ। দৈনিক ২৪ ঘন্টা কম্প্যুটার গেমে লিপ্ত থাকার মধ্য দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাই তাকে যতটা সম্ভব কম শাস্তি দেয়া হলে পরবর্তীতে তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ