বাংলাদেশের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল পরিচালিত চলচ্চিত্র " ঝলমলিয়া- The Sacred Water " যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনি শহরে অনুষ্ঠেয় পাঁচ দিনব্যাপী ক্যাপিটাল সিনেমা কালচারাল এক্সচেঞ্জ সিনেমা ল্যাব ও প্রদর্শনীর সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে। আগামী ১৫ অক্টোবর চেক প্রজাতন্ত্রের বার্নো শহরে অনুষ্ঠেয় '৪২তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল ইকো ফিল্ম, ১৬'-এ বাংলাদেশি এন্ট্রি হিসেবে প্রতিযোগিতা বিভাগে "ঝলমলিয়া -The Sacred Water "-এর ইউরোপীয় প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, এটি ইউরোপের প্রচীনতম পরিবেশ বিষয়ক চলচ্চিত্র উৎসব।
"ঝলমলিয়া - The Sacred Water" বাংলাদেশের জল, কাদা, জীবনের একটি ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের চলচ্চিত্র। ঘূর্ণিঝড় আইলা পরবর্তী ছয় বছর ধরে এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে মংলা বন্দরের অনতি দূরে দক্ষিণাঞ্চলের একটি গ্রামে। বাংলাদেশের উপকূলীয় গ্রাম, গ্রামীণ জীবন এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে নিবিঢড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিতে। এক ঘূর্ণিঝড় হতে পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা পর্যন্ত চলচ্চিত্রের চিত্রধারণ চলেছে অবিরত।
প্রামাণ্যচিত্রের গল্পটি এরকম: সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় সমগ্র অঞ্চলজুড়ে সুপেয় পানির অভাব। সেখানে একটি দীঘি হয়ে আছে মানুষের পানেয় জলের এক মাত্র উৎস। ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় সমগ্র অঞ্চল প্লবিত হলেও দীঘিটি রক্ষা পায়। এই দীঘিকে ঘিরেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাপন, লৌকিক-অলৌকিক গল্প আর কল্প কথা। এক দুপুরে বালিকা সুমাইয়া বসে ছিল দীঘির পাড়ে। দশ বছরের সুমাইয়ার স্কুলে যায় না। মাঠে গরু ছাগল চরায়, ঘরে বসে বিভোর হয়ে দেখে হিন্দি সিরিয়াল। সুমাইয়ার বাবা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। সুমাইয়ার মা ওর বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্য্যন্ত সুমাইয়ার মায়ের দম ফেলার সময় হয় না। ঘরদোর সামলে ছুটতে হয় তাকে মাঠে ঘাটে সবখানে। মাঝে মাঝে নদীর ভাঙ্গা পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে, বাতাসে ওড়ে তার শাড়ির আঁচল। সন্ধ্যায় ঝলমলিয়ার ঘাটে জল আনতে যেতে যেতে অপেক্ষায় থাকে, কথা বলে কারো সাথে। সমস্ত দিনের হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পরে এই একটুকু তার মনের শান্তি। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মানুষ টিকে থাকে, মনের সাথে যুদ্ধ করে মানুষ বাঁচতে পারে কি? ঝলমলিয়ার জলে টলমল করে মানুষের মুখচ্ছবি। দীঘির মিষ্টি জলে কখনো ঝড়ে পড়ে ক'ফোটা চোখের নোনা জল ক্যামেরার লেন্স তা ঠিক করে ধরতে পরে না। মানুষের অন্তরে অচিন যে পাখির বাস সে কেবল খাঁচা ছেড়ে উড়ে যেতে চায় বারে বারে। মুক্তি কি শেষমেষ মিলে কারো!
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ