টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ'র মিজান কমপ্লেক্স মিলনায়তনে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণ পর্ষদ আয়োজিত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। আজীবন সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি সোচ্চার থাকা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বর্তমান ব্রাহ্মমবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে ১৮৮৬ সালের ২রা নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। নবীনগর উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা জিলা স্কুল ও কোলকাতার রিপন কলেজে শিক্ষা গ্রহণের পর পরই বিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুতে ভারতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য হিসেবে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রত্যক্ষভাবে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলের যোগ দেন।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, সেই মুহূর্তে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৪৮ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলিষ্ঠভাবে তৎকালীন পূর্ব বাংলার অফিস আদালত ও স্কুল কলেজের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর পাকিস্তানের মূল জনগোষ্ঠী শতকরা ৭ ভাগ উর্দু ও ৫৬ ভাগ বাংলায় কথা বললেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে অগ্রাহ্য করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত করে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব বাংলার স্কুল-কলেজ ও অফিস আদালতের ভাষা হিসেবে দাবি করলেও পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী সেটা নাকচ করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি এক চরম রূপ ধারণ করে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৫৬ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে পূর্ব বাংলার স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালের ২৯ শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে তাঁর কুমিল্লাস্থ বাসভবন থেকে কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর তাঁকে ও তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র দিলীপ দত্তকে হত্যা করে। মৃত্যুর সময় বাংলার সাধারণ মানুষের এই প্রাণপ্রিয় নেতার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুলের সম্পাদিত ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক আর্কাইভ ফুটেজ ও অভিনীত শুটিংকৃত ফুটেজ থেকে নির্মিত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জীবন ভিত্তিক ৩০ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণ পর্ষদ এর আহ্বায়ক রেজা অনিরুদ্ধ। ধীরেন্দেনাথ দত্তের জীবন কর্ম ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও স্বাস্থ্যখাতে তাঁর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন টিটু খন্দকার, জিয়া আনসারী, ওয়াহিদ আসগর, আব্দুল হালিম মিয়া, মনিস রফিক ও কিরিট সিংহ রায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেয়ের কাছে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা চিঠি পাঠ করেন আসমা হক এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ওপর লেখা আসাদ চৌধুরী ও শামসুর রাহামানের কবিতা পাঠ করে মেরী রাশেদীন ও মেহেরাব রহমান। সবশেষে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রিয় দুটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন পার্থ সারথী শিকদার। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণ পর্ষদের সচিব আহমেদ হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার