বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কানাডার অটোয়ায় বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
বর্ষবরণের লক্ষ্যে দূতাবাসের উদ্যোগে নগরীর ঐতিহ্যবাহী ব্রন্সন সেন্টারে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে অটোয়া, টরন্টো ও মন্ট্রিয়েল থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি যোগ দেন। কানাডা ও অন্যান্য দেশের অতিথিরাও আসেন এ বৈশাখী মেলায়।
বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ কে স্বাগত জানিয়ে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি এবং আমাদের দেশজ কৃষ্টিকে তুলে ধরা এ বৈশাখী মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। এতে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। তারই আলোকে কানাডা প্রবাসীদের কল্যাণে সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। তাই কানাডার মতো এই দূর প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে বাংলা নববর্ষ উদযাপন ও বৈশাখী মেলার আয়োজন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে বাঙালি সংস্কৃতিকে উৎসাহ দান ও সম্প্রসারণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ঐতিহ্যবাহী বাংলা গান ও সুরের ঝংকারে সুস্বাদু বাঙালি খাবারের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়।
মেলার স্টলগুলোর অন্যতম ছিলো "Movement for Deportation of Killer Nur Chowdhury" আন্দোলন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মেলায় আগত অতিথিদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মিসেস সোমা সাইফুদ্দিন।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম স্টলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য, পর্যটন, গ্রাম-বাংলার জীবন, পালা-পার্বন ও উৎসবের প্রতীকসমৃদ্ধ বিভিন্ন স্মারক ডিসপ্লে করা হয়।
হাইকমিশনের দ্বিতীয় স্টলে অতিথিদের দেশীয় বিভিন্ন খাবারে আপ্যায়নও করা হয়। গত ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিনে কানাডার বিভিন্ন শহরে হাইকমিশন আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত নির্বাচিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী মেলায় যোগ করে বাড়তি আকর্ষণ, যা মুগ্ধ করে আগত অতিথিদের।
বিভিন্ন পসরা নিয়ে সাজানো স্টলগুলোর মধ্যে ছিল- অ্যালাইভ এডুকেশন (বিকল্প শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান), বাংলা ক্যারাভান, কবি-লেখক মোহসীন বখতের বইয়ের সংগ্রহ, নার্গিস বুটিক, ফিউশন বুটিক এবং 'ডানা'স কুইসিন' (বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় খাবারের দোকান)।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বের আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান ও তার সহধর্মিনী নিশাত রহমান।
"Bangabandhu, The Greatest Leader" বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় 'ক' গ্রুপে (বয়স ৫-১০) প্রথম হন তাসমিয়াহ খান; দ্বিতীয় দেওয়ান ফাতিমা সাইয়িদা এবং তৃতীয় আরিয়ানা আলিশা চৌধুরী। 'খ' গ্রুপে (বয়স ১১-১৬ বছর) প্রথম হয় সন্দীপন সাহা, দ্বিতীয় ওয়াফা ইসলাম এবং তৃতীয় ফাইকা শিকদার।
মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাখাওয়াত হোসেন (বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব), রিজওয়ানা আলমগীর, শিশির শাহনেওয়াজ এবং শিশুশিল্পী তাথৈ। সমবেত কণ্ঠে "এসো হে বৈশাখ এসো এসো" এবং "টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল" গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় শিশুশিল্পী এ্যালিসিয়া, ইস্টি, আলিনা, ওয়াজিদ এবং চন্দ্রিমা (হারমোনিয়াম ও নির্দেশনায় ডালীয়া ইয়াসমীন, তবলায় শুভঙ্কর)। কবিতা আবৃত্তি করেন গিয়াস ইকবাল সোহেল এবং শিশু আবৃত্তিকার সানোভা। নাচ পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করে কারিনা দত্ত এবং শিশু নৃত্যশিল্পী লারিসা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ। সার্বিক নির্দেশনায় মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবার সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অতিথিদের স্বাগত জানান এবং কূশল বিনিময় করেন।
বিডি প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৭/এনায়েত করিম