বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় প্রবাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর অঙ্গীকারে কর্মরত ‘বেন’র দুই দশক পূর্তি উৎসব শনিবার (৩০ জুন) উদযাপিত হবে। এই উৎসবে দীর্ঘদিনের কর্মকাণ্ডের গতি-প্রকৃতি আলোচনা-পর্যালোচনার পর ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা স্থির করা হবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কী করা উচিত সে ব্যাপারেও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মতামত দেবেন বাস্তবতার আলোকে। এ উৎসবে থাকবেন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের পরিবেশবিদ, সমাজ সংগঠক, লেখক-সাহিত্যিক-গবেষকরা। বাংলাদেশ নিয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে আগ্রহী নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণও ঘটবে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায়।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পিএস ৬৯ এর মিলনায়তনে এসব অনুষ্ঠান হবে। এ উপলক্ষে ২৬ জুন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক তথা বেনের নীতি-নির্দ্ধারকরা এতে ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন ২০ বছর পূর্তি উৎসবের আহ্বায়ক নিনি ওয়াহেদ। পানি বিশেষজ্ঞ ড. সুফিয়ান এ খন্দকার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী ও নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান ড. নূরননবীও কথা বলেছেন এ আলোকে।
বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী জাতিসংঘের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম গত ২০ বছরের কার্যক্রমের আলোকে বলেন, অনেক কিছুর সফলতা দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক কিছু চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহায়তাও কোনো কোনো সময় পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে বাংলাদেশের তৃণমূলে কাজের জন্যে বাপা গঠিত হওয়ায়। তাদের এখন সরকারের যে কোনো কর্মপরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
এ সময় জানানো হয় যে, এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। অর্থাৎ বেনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তথ্য সরকারের নজরেও যাবে।
নিনি ওয়াহেদ জানান, প্রবাস-প্রজন্মের অংশগ্রহণে পরিবেশ সম্পর্কিত রচনা লেখা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হবে সকাল ১০টায়। সকাল সাড়ে ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এ সময় বেনের ২০ বছরের আলোকে একটি উপস্থাপনা থাকবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ নিয়ে কর্মরতদের মধ্য থেকে বক্তব্য থাকবে উদ্বোধনী সেশনে। পরিবেশ সুরক্ষা আলোকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে উদ্বোধনী পর্বে।
বেলা একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ভিডিও প্রদর্শনী। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ২৪ ঘণ্টার অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি ভিডিও প্রদর্শন হবে পরিবেশ নিয়ে কর্মরত সারা ক্যামেরুন সুন্দের সৌজন্যে। এরপর থাকবে বরাল নদীর দুরবস্থার চিত্র।
বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সিম্পোজিয়াম হবে। হাওড় এলাকায় বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-আলোকে এ সময় গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লক হ্যাভেন ইউনিভার্সিটির পানি বিশেষজ্ঞ ড. খালেকুজ্জামান এবং রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরিকরণের সুপারিশ সম্পর্কিত গবেষণা-বক্তব্য উপস্থাপন করবেন পানি বিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান এ খন্দকার। আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান হবে। অপরাহ্ন সাড়ে ৩টায় শুরু হবে দ্বিতীয় সিম্পোজিয়াম। এ সময় বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার জেনারেশন আলোকে গবেষণামূলক মতামত উপস্থাপন করবেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলের অধ্যাপক ড. আহমদ বদরুজ্জামান। বাংলাদেশে সৌর-জ্বালানীর ব্যবহার আলোকে বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ড. সাজেদ কামাল। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা বিপন্ন হবার যে আশংকা করা হচ্ছে, তা থেকে রক্ষার কর্ম-পরিকল্পনার প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন ড. দ্বীপেন ভট্টাচার্য। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। ৫টা থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত পরিবেশ-আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় হবে। এতে অংশ নেবে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।
তারা হলেন- কিউনির হুমায়ূন কবীর, নিউইয়র্কের সাঈদা আফরিন এবং বেন ইয়ূথ ফোরামের যোরা হক। পৌনে ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা হবে বাংলাদেশে পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনের অভিজ্ঞতা এবং গতি-প্রকৃতির আলোকে। এতে অংশ নেবেন বেনের ট্রেজারার ও এক্সপার্ট প্যানেলের চেয়ার ড. সালেহ তানভির, প্রগ্রেসিভ ফোরামের প্রেসিডেন্ট খোরশেদুল ইসলাম, বাপার হবিগঞ্জ জেলা শাখার সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক শরিফ জামিল। এরপর নাটক, নৃত্য এবং সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় সমাপ্তি ঘটবে কর্মসূচির।
সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন ট্রাই-স্টেট বেনের সমন্বয়কারি সৈয়দ ফজলুর রহমান, ২০তম বার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব মোহাম্মদ হারুন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম