প্রবাস প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার পাশাপাশি মূলধারার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির সংকল্পে হাজারো প্রবাসীর উচ্ছল উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলাদেশ মেলা’। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা নতুন ভূখন্ডের মতো বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মাইল দূরে যুক্তরাষ্ট্রে আটলান্টিক মহাসাগর বিধৌত আটলান্টিক সিটির বুকে গত বুধবার যেন জেগে উঠেছিল একখন্ড বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির উদ্যোগে ‘সেন্ড ক্যাসল স্টেডিয়াম’-এর সুবিশাল প্রান্তরে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মেলা-২০১৮’-তে জড়ো হয়েছিল আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারি নতুন প্রজন্মের শত শত তরুণ-তরুণীও। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকেও বাংলাদেশীদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। এক পর্যায়ে প্রবাসীদের ভিড়ে এই মেলা পরিণত হয় জনারণ্যে। মেলায় হরেক আয়োজনের মধ্যে ছিল দেশীয় পণ্যের বিকিকিনি, দেশীয় খাবারের স্টল, কৃতী ছাত্র-ছাত্রী সম্বর্ধনা, গুণীজন সম্বর্ধনা, র্যাফেল ড্র এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মেলা’য় প্রধান অতিথি ছিলেন ‘আবদুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’-এর সেক্রেটারি আবদুল কাদের মিয়া।
এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন আটলান্টিক সিটির মেয়র ফ্রাঙ্ক এম গিলিয়াম, নিউজার্সি স্টেট সিনেটর ভ্যান ড্রিউ, স্টেট সিনেটর ক্রিস ব্রাউন, এ্যাসেম্বলিম্যান জন আরমাটো , আটলান্টিক কাউন্টি শেরিফ এরিক শেফলার, আটলান্টিক কাউন্টির প্রধান নির্বাহী ডেনিস লেভিনসন, কাউন্টির প্রসিকিউটর ডেমন জি টাইনার এবং আটলান্টিক সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলরবৃন্দ ।
আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ অতিথিদেরকে বাংলাদেশ মেলায় উপস্থিত প্রবাসীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে, কপালে জাতীয় পতাকার ব্যান্ড বেঁধে, জাতীয় পতাকার রংয়ের পোশাক পরে মেলায় যোগ দেয় নতুন প্রজন্মের সদস্যরা। তাদের উৎসাহ, উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রধান অতিথি আবদুল কাদের মিয়া বেলুন উড়িয়ে ‘বাংলাদেশ মেলা’র শুভ উদ্বোধন করেন। এই পর্বে আবদুল কাদের মিয়া উপস্থিত সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বহুজাতিক এই সমাজে বাঙালি সংস্কৃতি তথা বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখতে এমন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। এভাবেই আমাদের প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে রাখার পাশাপাশি মূলধারায় নিজেদের সুদৃঢ় অবস্থানের জানান দেয়াও সহজ।’
কাদের মিয়া আরও বলেন, ‘প্রিয় মাতৃভ’মির কল্যাণে জোরদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সহজ হবে যদি আমরা সকলেই মার্কিন প্রশাসনে সম্পৃক্ত হতে পারি।’ এসময় হোস্ট সংগঠনের শহীদ খান, মোঃ সেলিম, সৈয়দ মোঃ কাউছার, কাঞ্চণ বল, সেলিম সুলতান, সোহেল আহমদ, ফরহাদ সিদ্দিক, মিরাজ খানও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এসময় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির ট্রাষ্টি বোর্ডের প্রধান কাঞ্চণ বল, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া, সেলিম সুলতান, শামসুল ইসলাম শাহজাহান, মনির হোসেন, আবদুল জামিল, জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া, জসিম উদদীন, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শহীদ খান, সাধারন সম্পাদক সোহেল আহমদ, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মোঃ কাউছার, “বাংলাদেশ মেলা-২০১৮” এর আহবায়ক মোঃ সেলিম, সদস্য সচিব ফরহাদ সিদ্দিক, প্রধান পৃষ্ঠপোষক মিরাজ খান, সার্বিক তত্ত্বাবধানের প্রধান মাসুদ চৌধুরী, প্রধান সমন্বয়কারী বিপ্লব দাশ, সার্বিক সহযোগীতায় প্রধান গোলাম হাফিজ নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলেন।
মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু, কিশোর-কিশোরীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সংগীত শিল্পী সান্তনা রায় চৌধুরীর পরিচালনা ও কোরিওগ্রাফার নিবেদিতা ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় ছোটদের নান্দনিক এ পরিবেশনা মেলায় উপস্থিত প্রবাসীদের বিমোহিত করে। এই পবর্টি সঞ্চালণা করেন জয়ন্ত সিংহ।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকান কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সংবর্ধনা। বিভিন্ন স্কুলের অষ্টম গ্রেড পর্যন্ত কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্রেস্ট প্রদান করে সংবর্ধিত করা হয়। অনুষ্ঠানে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখে আটলান্টিক সিটি হাই স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জনকারী মমতা মিলি, দশম স্থান অর্জনকারী সালমা বেগম। বিপ্লব দেব’র সঞ্চালনায় আয়োজক সংগঠনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি মেলায় উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশ প্রশংসা কুড়ায়।
বাংলাদেশ মেলার বিভিন্ন ষ্টলে দেশীয় পণ্য ও খাবারের স্টলগুলোতে বিকিকিনি ছিল লক্ষ্যণীয়। আটলান্টিক সিটির তিন কৃতি প্রবাসীকে বাংলাদেশ মেলায় বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। তারা হলেন কমিউনিটি সেবায় সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া, সেলিম সুলতান ও সাংবাদিকতায় সুব্রত চৌধুরী। এছাড়া আটলান্টিক সিটি প্রেস ক্লাবকেও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসাবে ক্রেস্ট তুলে দেন আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি আবদুল কাদের মিয়াকে কমিউনিটি সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য সন্মাননা স্মারক হিসাবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আটলান্টিক সিটির মেয়র ফ্রাঙ্ক এম গিলিয়াম, স্টেট সিনেটর ভ্যান ড্রিউ ও মেলার সদস্য সচিব ফরহাদ সিদ্দিক সম্মিলিতভাবে আবদুল কাদের মিয়ার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেন সংগীত শিল্পী সায়রা রেজা ও মারিয়া । সবশেষে বিপুল করতালির মধ্যে মঞ্চ মাতাতে আসেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। শিল্পী আবদুল হাদীকে আজীবন সন্মাননা হিসাবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর