প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। মালয়েশিয়া প্রবাসী সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হয়রানি আর ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের নিজ দেশে ফেরত যেতে সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকার গত ১লা আগস্ট থেকে ঘোষণা করে B4G (ব্যাক ফর গুড) কর্মসূচির। যা এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে।
তবে কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও ধারপাকড় বন্ধ নেই, প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চলছে ধরপাকড়।
এ কর্মসূচিতে সাত দিন সময়ের এয়ারলাইন্স টিকেট, মূল পাসপোর্ট বা কপি ও ইমিগ্রেশনে ৭০০শ' রিঙ্গিত বা বাংলাদেশী অর্থে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে দেশে ফেরত যাওয়ার কথা থাকলেও পবিত্র ঈদুল আজহার সময় এয়ার টিকেটের দাম দু'-তিন গুন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন ঈদ শেষে দেশে ফেরার।
ঈদ শেষে বর্তমানে এয়ার টিকেটের মূল্য কিছুটা কমলেও নতুন করে শুরু হয়েছে ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি। ইমিগ্রেশনের এসপি (স্পেশাল পাস) পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
দূর দূরান্ত থেকে এসে ইমিগ্রেশনের ফ্লোরে রাত কাটিয়েও ইমিগ্রেশনের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এসপি পেতে তিন থেকে চারদিন ঘুরতে হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রবাসীদের। আবার সম্প্রতি শেষ হওয়া বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেও এখনো ভিসা না পাওয়া অনেকেই বিরক্ত হয়ে দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছেন।
এসপি না দিয়েই তাদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে ইমিগ্রেশন থেকে। কষ্ট করে এসপি পেলেও সাথে দিচ্ছে তিন থেকে পাঁচ বছরের কালো তালিকাভুক্তির সাজা। তাই অনেকেরই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সাধারণ ক্ষমাতো সাধারণ ক্ষমাই। জরিমানা নিয়ে কালো তালিকাভুক্তি এটা আবার কেমন সাধারণ ক্ষমা! মালয়েশিয়া সরকার আমাদের থাকতেও দিবে না আবার যেতে চাইলেও ভোগান্তি দেবে, এটা কেমন বিচার। আমরা এ বিষয়ে আমাদের হাইকমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।
এ বিষয়ে গত দু'দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার ২৩ আগস্ট পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশন ভিজিট করি, অফিসার ইনচার্জ জানালেন দৈনিক ৪শ' জন অভিবাসীকে এসপি দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে যারা থাকছে তাদের পরের দিন আসতে হচ্ছে। তিনি জানালেন অন্যান্য যেসব ইমিগ্রেশন অফিসে ভিড় নেই বরং সে সব অফিসে গেলে দ্রুত কাজ হবে। '
তিনি আরও বলেন, ইমিগ্রেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় পুত্রাজায়া, জ্বালান দুটা এবং শাহ আলম ইমিগ্রেশনে অতিরিক্ত সমাগম হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাদেশিক ইমিগ্রেশন অফিস কিছুটা ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য আরো প্রায় ১৫টি দেশের অভিবাসীরাও এ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। যারা যে প্রদেশে আছেন তাদেরকে সে প্রদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়াও বিমান ভ্রমণের তারিখের ৫ দিন আগে ইমিগ্রেশনে গেলে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে।
এদিকে, আম্পাংয়ে অবস্থিত পাসপোর্ট সার্ভিস কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন টিপি (ট্রাভেল পাস) দেওয়া হচ্ছে। যাদের পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ, নষ্ট বা হারিয়ে গেছে তাদের জন্যই মূলত টিপি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নাই; সাগর পথে পাচার হয়ে এসেছে বা মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট খুইয়েছে; তাদের টিপি দিতে হচ্ছে সাবধানে। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে টিপি ইস্যু করছে বলে জানা গেছে। দেখা গেছে সকালে আবেদন জমা দিয়ে সব ঠিক থাকলে বিকালেই টিপি ইস্যু করা হচ্ছে বলেও জানান হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল।
বিডি-প্রতিদিন/হিমেল/মাহবুব