২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৯:৩৫

জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করবেন শেখ হাসিনা

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করবেন শেখ হাসিনা

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় টার্মের মত চতুর্থ টার্মের প্রথম জাতিসংঘ সফরেও বঙ্গবন্ধু কন্যা তথা বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে সম্মাননা জানাবে বিশ্বসংস্থা। প্রধানমন্ত্রী পাবেন ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কীল ডেভেলপমেন্ট অব ইয়ুথ’ এবং ‘ভ্যাক্সিন হিরো’ এওয়ার্ড। 

২৩ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনে মোট ২৪ টি ইভেন্টে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। ২৩ সেপ্টেম্বর ৪টি হলেও ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ৬টি ইভেন্টে বক্তব্য রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসবেন শেখ হাসিনা। গতবারের মত এবারও নিজ খরচে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বে ১৩৩ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আসছেন মার্কিন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারিদের সাথে কথা বলতে। সরকারী প্রতিনিধি দলে এবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা থাকবেন। 

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। আরো আসবেন শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও আসছেন প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে। এসব তথ্য জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। 

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফর আলোকে ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আহূত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মাসুদ আরো বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা উন্নয়ন কর্মকান্ডে গোটাবিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করা শেখ হাসিনার এটি হবে ১৬তম জাতিসংঘ সফর অর্থাৎ জাতিরপিতার অনুসৃত নীতির পরিপূরক বাংলায় ১৬বার ভাষণ প্রদানের ঘটনা। গণতান্ত্রিক বিশ্বে দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবারও জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে নিজের উদ্ভাবনী মতবাদ উপস্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুত অর্থের কিয়দংশ জাতিসংঘ অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাবার পরও কীভাবে লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দীপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে-সে কাহিনীও বিবৃত হবে বঙ্গবন্ধু কন্যার বক্তব্যে। এছাড়া ওয়ালস্ট্রিট জার্ণাল এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মত খ্যাতিসম্পন্ন গণমাধ্যমেও দারিদ্র বিমোচনে অবিশ্বাস্য অগ্রগতির কথা জানিয়ে সাক্ষাৎকার দেবেন  শেখ হাসিনা। তার জাতিসংঘ সফর ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের মত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও বিরাজ করছে ভিন্ন এক আমেজ। উল্লেখ্য, ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার তিনি নিউইয়র্কে আসবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর তার বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগের কথা। 
আরো উল্লেখ্য, ১৭ সেপ্টেম্বর হতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪-তম অধিবেশন নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব ২৪ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে, জেএফকে এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী পরিবারে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য স্টেটের নেতৃবৃন্দও থাকবেন অভ্যর্থনা সমাবেশে। চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবকিছুকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সম্পন্ন করতে চান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। 
এই সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা। এ সময় সেখানে ছিলেন উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এবং মিনিস্টার মনোয়ার হোসেন । 

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে অবস্থানকালে দুটি সংস্থার আমন্ত্রণে তাদের সদস্যগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেনঃ 
২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ এর আমন্ত্রণে এর সদস্যবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করবেন। 
২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সংগঠন ইউএস চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যায় একটি গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারি পররাষ্ট্র সচিব এবং বর্তমানে এই চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে এই বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশ হতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দও অংশগ্রহণ করবেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সাথে দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। 
এসকল সভার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক সকল দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানগণের জন্য আয়োজিত  মধ্যাহ্ন ভোজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আয়োজিত অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করবেন। 
জাতিসংঘ মহাসচিব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের সভাপতি, আইসিসির চীফ প্রসিকিউটরসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধান গণের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।  

সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ২৬ সেপ্টেম্বর পরমানু নিরস্ত্রিকরণ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। এ প্রসঙ্গে মোমেন এ সংবাদদাতাকে জানান, আমরা ইতোমধ্যে ‘Treaty on the Prohibition of Nuclear Weapons’ শীর্ষক চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করার প্রথম দিনেই বাংলাদেশ তা স্বাক্ষর করেছিল। এছাড়া, আমি রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপ-এর সভা, কমনওয়েলথ পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণের সভা, কমনওয়েলথ্ মিনিস্টারিয়াল গ্রুপ-এর সভাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা যেমনঃ সার্ক, ন্যাম, জি-৭৭, এশিয়ান কো অপারেশন ডায়ালগ, CICA, এল ডি সি গ্রুপ ইত্যাদি সংস্থাসমূহের মন্ত্রীপর্যায়ের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করবো। 
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের সদস্যবৃন্দ এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়ন, পৃথিবীব্যপী শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মকান্ডে দাতা সংস্থা ও দাতাদেশ সমূহের অর্থায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আয়োজিত বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর