ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়াম ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় হয়ে উঠেছিলো এক টুকরো বাংলাদেশ! মিউজিয়ামের অভ্যর্থনা কক্ষ, বিশাল বিশাল এলইডি মনিটরে ভেসে উঠেছিল বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, সেই সাথে ছিলো রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি। অন্যপাশে বড় এলইডি স্ক্রিনে চলছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃথিবীব্যাপী গৌরবোজ্জল ভূমিকার ভিডিওচিত্র। সেই সাথের দেশের গান এক অদ্ভুত আবহ তৈরি করেছিলো। আর শত শত ভিনদেশী অতিথিরা দেখেছেন, বিস্ময়ে অবাক হয়েছেন, আবার অভিভূত হয়ে হাততালি দিয়েছেন।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রতিরক্ষা শাখার উদ্যোগে গত ২৫ নভেম্বর সোমবার “৪৮তম বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস” যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত একজন ব্রিটিশ কূটনৈতিকতো জানান, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর যে অবদান সেটা অবাক করার মতো।
লন্ডন মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম. আমিনুল হক এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উযযাপনে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রতিটি উপস্থাপনে ছিলো নান্দনিকতা আর পরিশীলতার ছোয়া।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিষ্ঠা ও দেশে-বিদেশে এর বিশেষ ভূমিকা সম্বলিত বর্ণিল ব্যানারে সুসজ্জিত অনুষ্ঠানস্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাদর অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম ও লন্ডন মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ও বীর-উত্তমদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী এই আয়োজনে এনে দিয়েছিলো ভিন্নমাত্রা।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দেশ সুরক্ষার পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এই রোহিঙ্গাদের জন্য রাস্তাঘাট ও বাসস্থান তৈরি, তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতেও নারী পাইলট, প্যারট্রুপার এবং কনটিনজেন্ট কমান্ডারসহ অনেক নারী কর্মকর্তা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছেন।
হাইকমিশনার যুক্তরাজ্য ও বালাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করে আশা করেন ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো সুগভীর হবে।
প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার আমিন তার স্বাগত বক্তব্যে সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং তাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হতে চলেছে ভিশন ২০৪১-এর মাধ্যমে। প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ রচিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই নতুন ব্রিগেড, তিনটি পদাতিক ডিভিশন এবং একাধিক নৌ ও বিমান ঘাঁটির সংযোজন হয়েছে। এছাড়াও সংযোজিত হয়েছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি।
প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সক্রিয়ভাবে নিবেদিত। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বিশেষকরে হলি আর্টিজান বেকারি এবং আতিয়া মহলে জঙ্গি দমনে সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব দেশে ও বিদেশে বহুল প্রসংশিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবদান উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা আজ সারা বিশ্বে প্রসংশিত।
অনুষ্ঠানে হাই কমিশনার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন অভ্যাগত অতিথিদের নিয়ে একটি কেক কাটেন। এরপর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
লন্ডন মিশনের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোহেল আহমেদের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৪০০ আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন লন্ডনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকবৃন্দ, ডেপুটি মিনিস্টার অব ওয়েলস জুলি মরগান, হাউজ অব লর্ডস-এর সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক ফোরামের ডিন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সামরিক এবং অসামরিক কর্মকর্তাগণ, ক্যামব্রিজ, সেফিল্ড, অক্সফোর্ড ও পোর্টসমাউথসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ, বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং লন্ডনে বাংলাদেশি-বৃটিশ কমিউনিটির গণমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা