একদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় অন্যদিকে ক্ষুধার অসহ্য যন্ত্রণা। এমনই এক দুর্বিষহ সময় পার করছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে থাকা অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন কথিত ফ্রি ভিসায় থাকা কর্মীরা। কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুর দিকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে নতুন ভিসায় আসা কর্মীরা গভীর সংকটে নিমজ্জিত। মহামারির এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব তাদের কাছে যেনো কল্পনাবিলাস। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোস্তফা নামের প্রবাসী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি এসেছি আজ ৪ মাস। কাজ নেই, খাবার নেই, টাকা নেই এমনকি থাকার জায়গা পর্যন্ত নেই।
আরেক প্রবাসী বলেন, আমাদেরকে এ পর্যন্ত ১০টি ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে কোথাও কাজে নিচ্ছে না। আমরা এখানে না খেয়ে আছি। দেশে আমাদের পরিবার না খেয়ে আছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যখন নিজেকে বাঁচাতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশিরা একরুমে ১৫/২০জন গাদাগাদি করে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। সামাজিক দূরত্ব এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার তো দূরের কথা তাদের দিন কাটে শুকনো রুটিতে। পালাবদল করে তাদের ঘুমাতে হয়। এরমধ্যে বাড়তি যন্ত্রণা হিসাবে যোগ হয়েছে সৌদিতে আসার জন্য ব্যাংক থেকে নেয়া কিস্তি আর পরিবারের খাবার কেনার তাড়া।
ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ রিয়াদের সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, প্রবাসী বাংলাদোশিরা কষ্টে আছেন। সরকার থেকে যে সাহায্য আসছে সেটা যথেষ্ট নয়। প্রবাসীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারও দেশে কষ্টে আছেন। সরকারের দেয়া প্রণোদনায় প্রবাসীদের পরিবারকে সাহায্য করার দাবি জানান তিনি।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৬২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে ৭৯ শতাংশই বিদেশি নাগরিক। মারা গেছেন ৯৭ জন এর মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ১৮ জন। মদীনায় ৪ হাজার বাংলাদেশিকে করোনা টেস্টে রাজি করাতে গিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম। জেদ্দার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তার এই আক্রান্তের খবরে মিশনে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক।
দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য পাঠানো খাদ্য সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল উল্লেখ করে সেটি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি প্রবাসী কাজী নাজিব উল মোবারক।
বৈশ্বিক এই মহাসংকটে সরকারের পাশাপাশি অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোতাহার হোসেন লিটন।
প্রবাসীদের বড় অংশ নিয়মিত দেশে টাকা পাঠাতেন। যারা প্রতি মাসের বেতন হাতে পেয়ে বা অন্যান্য আয় থেকে নিজের খরচটা রেখে বাকি সব টাকা দেশে পাঠিয়ে দেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে। হাতে টাকা না থাকার কারণে তারা এখন নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা