মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব নিস্তব্ধ। এর মধ্যেই বাংলাদেশে ছুটিতে থাকা কাতার প্রবাসীরা আগস্ট মাসে ফিরতে পারবেন। কিন্তু ফিরলেও নেই তাদের জন্য কোনো সুখবর। কাতারে ফেরার পর তাদের নিজ খরচে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, তাও আবার থ্রি স্টার থেকে ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে।
দেশে ছুটিতে থাকা প্রবাসীরা যাদের ভিসার মেয়াদ আছে শুধু তারাই কাতারে ১ আগস্ট প্রবেশ করতে পারবেন কঠিন নিয়মনীতির মধ্যে। তবে ইতিমধ্যেই যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের আসার ব্যাপারে কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস কাতার।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চাকরি হারানো প্রবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার ত্রাণ উপহার দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিরণের পাশাপাশি অসুস্থ প্রবাসীদের সার্বিক খোঁজ খবর ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে মরুর বুকে প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যেও রাজধানী দোহা, ওয়াকরা, আলখুর, আল শামাল, শাহনিয়া, সানাইয়াসহ বিভিন্ন সময় এসব অঞ্চলে গিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
তাছাড়া কাতার সরকারের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব পরিস্থিতি। তাই প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যোগাযোগ স্থাপন করে যাচ্ছেন। সেইসাথে প্রবাসীদের দু'পক্ষের বিবাদমান সমস্যা খুব দ্রুততার সাথে নিরসন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম কাউন্সিলর ড. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের কাজ ই-প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের সমস্যা সম্ভাবনা ও কল্যাণের জন্য কাজ করা। বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ যখন গৃহবন্দী ঠিক সেই সময়েও থেমে নেই আমাদের পথচলা। করোনাকালে পরিবারের শতবাধার মধ্যেও প্রবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া প্রবাসীদের শতভাগ সেবা পৌঁছে দিতে নিজেও এই কাজের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি লাভ করি।
অন্যদিকে, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ জানান, প্রবাসী কর্মীদের দূতাবাসের সেবার মান নিশ্চিত করতে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে আগের সেই দীর্ঘ লাইন নেয়। এতে খুব সহজেই টুকেন এর মাধ্যমে সিরিয়াল সংগ্রহ করে দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করে চলে যেতে পারেন প্রবাসীরা। তাছাড়া কর্মহীন প্রবাসীদের দেশে যাওয়ার জন্য ১০ জুন ৪০৯ জন যাত্রীর একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছি, প্রয়োজনে পরিস্থিতি বুঝে আরেক ফ্লাইট পরিচালনা করবো।
প্রবাসীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য দূতাবাসের একটি হটলাইন নাম্বার চালু রয়েছে। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়াম নির্মাণ সেই সাথে পুরো কাতার জুড়ে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমানে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে এবং অনেক প্রকল্প'র কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যার কারণে এখন কাতারে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাতার সরকারের আইন-কানুন মেনে চলার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে কাতারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৭৬ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮৬৮১ জন। আর এ পর্যন্ত ১৩ বাংলাদেশিসহ ৭৬ জন মৃত্যুবরণ করেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম