করোনার কারণে চরম অর্থ সংকটে পড়া লোকজনের মাঝে বিনামূল্যে খাবার পরিবেশনের কর্মসূচিতে হালাল খাদ্য অন্তর্ভুক্তির আহ্বানে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিমন্ত্রী সনী পারডিউ সমীপে নিউইয়র্কের ১০ কংগ্রেসম্যান একটি চিঠি দিয়েছেন।
যুক্তস্বাক্ষরের ঐ পত্রে স্বাক্ষরকারি কংগ্রেসম্যানদের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং (কুইন্স-ডেমক্র্যাট) এই সংবাদদাতাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি’তে নিউইয়র্কে গত এপ্রিল থেকেই রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পাবলিক স্কুল, চার্চ, সিনোগগ, মসজিদ, মন্দির, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ স্থানেই হালাল/কুশের খাদ্য থাকে না। এরফলে মুসলমান কিংবা জুইশরা অনাহারেই দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে হালাল/কুশের নয়-এমন খাদ্য গ্রহণে তারা বাধ্য হচ্ছেন। এমন অমানবিক পরিস্থিতির অবসান জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্যে খাদ্য সরবরাকারিকে নির্দেশ দেয়া উচিত হালাল/কুশের খাদ্য অন্তর্ভুক্তির জন্যে। অর্থাৎ খাবারের প্যাকেটে লেখা থাকতে হবে হালাল/কুশের খাদ্য। প্রয়োজনে এসব খাদ্য আলাদা টেবিলে রেখে বিতরণ করতে হবে। যাতে সংশ্লিষ্টরা স্বাচ্ছন্দে তা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, গত রমজানে নিউইয়র্ক সিটিতে এসব খাদ্য বিতরণের সময় হালাল খাবারের প্যাকেট আলাদাভাবে পরিবেশন করা হয় মুসলমানদের মধ্যে। ঈদের পর সে ব্যবস্থা আর নেই। এজন্যে কমিউনিটির লোকজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই পত্র দিলেন বলে জানা গেছে।
কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বলেন, ধর্ম অথবা জাতিগত বিশ্বাসের কারণে যারা হালাল/কুশের খাদ্য ব্যতিত অন্যকিছুর ধারে কাছেও যান না, তারা খুবই কষ্টে রয়েছেন। অথচ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দরকার পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। যাদের কাছে অর্থ নেই তারা এই দু:সময়ে নিজের পছন্দের খাদ্য-সামগ্রি ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছেন না বলেই ফেডারেল ও সিটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সারা আমেরিকায় বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচিকে সাফল্যমন্ডিত করতে সরবরাহকারিকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিতে হবে হালাল খাদ্যের প্যাকেট তৈরীর জন্যে। প্রয়োজনে অতিরিক্তি অর্থ বরাদ্দ করারও আহবানও জানিয়েছেন কংগ্রেসম্যানরা।
যুুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ কোশের খাদ্য প্রস্তুতকারি ‘মেট কাউন্সিল’র সিইও ডেভিড গ্রীণফিল্ড এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি সকলকেই বিপর্যস্ত করেছে। সারাজীবনে এমন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন কেউই হইনি। একেবারেই নতুন ও অদৃশ্য এই শত্রুর মোকাবেলা করতে সকলকেই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে চলতে হচ্ছে। লকডাউন শিথিল হলেও অনেকে কাজ ফিরে পাননি। বেকার ভাতাও প্রয়োজন অনুযায়ী পাচ্ছেন না। ফলে দৈনন্দিন খাদ্য-সামগ্রি ক্রয়ে সক্ষম না হওয়ায় ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। এটি খুবই সময়োপযোগী একটি কর্মসূচি। তবে তা যদি সকলের চাহিদার পরিপূরক না হয় তাহলে সরকারের সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে কীভাবে। এ অবস্থায় গ্রেস মেং-এর নেতৃত্বে কংগ্রেসম্যানরা যে আবেদন জানিয়েছেন তা অবিলম্বে পূরণের বিকল্প নেই।
সাউথ এশিয়ান কাউন্সিল ফর সোস্যাল সার্ভিস’র নির্বাহী পরিচালক সুধা আচার্য এ প্রসঙ্গে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, করোনার আতংকে অসংখ্য মানুষ অনাহার-অর্দ্ধাহারে দিনাতিপাতে বাধ্য হচ্ছে। এ তথ্য জেনেই সরকার নানাভাবে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। তবে তা অনেকের জন্যেই গ্রহণের যোগ্য হচ্ছে না। এজন্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে নিউইয়র্ক সিটিতেও। তাই হালাল/কুশের খাদ্য বিতরণের এই আহবানে সরকারের সাড়া দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, করোনা রিলিফ বিলে ‘কেয়ারস এ্যাক্ট’ অনুযায়ী ‘করোনাভাইরাস খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি’তে মোট ১৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে। সেই অর্থেই খাদ্যের প্যাকেট নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হলেও হালাল/কুশের খাদ্যের প্যাকেট সংযোজন করা হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন