উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশী কর্মচারি নিয়োগ কর্তাদের জন্যে ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার নয়া আইন জারির ঘোষণা দিয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার কার্যকর হবে। তুলনামূলক কম বেতনের মার্কিন কর্মচারিদের স্থলে এইচ-ওয়ান বি ভিসায় আনা বিদেশী কর্মীর জন্য নয়া বেতন-স্কেল ধার্য করা হলো মার্কিন কোম্পানীগুলোকে বিদেশী কর্মীর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করার অভিপ্রায়ে।
এরফলে করোনায় বিপর্যস্ত আমেরিকানদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস। উল্লেখ্য, চাকরিতে যোগদানের সময়েই এইচ-ওয়ান বি ভিসায় আগতরা কল-কারখানা/কর্পোরেশনের নির্দ্ধারিত বেতন-ভাতার ৪ শতাংশ করে পাবেন, যা বর্তমানের চেয়ে ১৭ শতাংম বেশী হবে। ট্রাম্পের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী কেন কুচিনেল গণমাধ্যমকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নয়া বিধির প্রভাব পড়বে এইচ-ওয়ান বি ভিসার আবেদনের এক তৃতিয়াংশ কোম্পানীর ওপর। আর এই বিধির সুফল পাবেন আমেরিকান শ্রমিক-কর্মচারিরা। কারণ, কোম্পানীগুলোকে একটি পন্থা বেছে নিতে হবে, উচ্চ বেতনে বিদেশী শ্রমিক আনা অথবা কম বেতনে দেশী শ্রমিক নিয়োগ করা।
শ্রম বিষয়ক উপমন্ত্রী প্যাট্রিক পিজ্বেলা বলেন, ‘আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে আমেরিকান কর্মীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।’ বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী ঘটছিল উচ্চ বেতন আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকরি থেকে আমেরিকানদের সরিয়ে বিদেশীদের পুনর্বাসন করা’। বর্তমানের রীতি অনুযায়ী এইচ-ওয়ান বি ভিসার বার্ষিক কোটা ৮৫ হাজার হলেও বাস্তবে কর্পোরেশনসমূহে কাজ করছেন ৫ লক্ষাধিক বিদেশী। এমন অবস্থার অবসানে গত নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অঙ্গিকার ছিল, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। সে লক্ষ্যেই অভিবাসনের নীতি পরিবর্তনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, এ অর্থ বছর মাত্র ১৫ হাজার রিফ্যুজিকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থ বছরের চেয়ে তা ৩ হাজার কম। ২০১৬ সালে ওবামার শেষ বছরে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার। সামনের নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে যো বাইডেন তা বাড়িয়ে সোলা লাখ করার অঙ্গিকার করছেন।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ট্রাম্প ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন পারিবারিক কোটা সীমিত করার। করোনার অজুহাতে জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশ থেকে অস্থায়ী ভিত্তিকে শ্রমিক আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে একটি ফেডারেল কোর্ট সেই নির্দেশকে বেআইনী ঘোষণা করেছে। সর্বশেষ এ বিধিকেও বড় বড় তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানীগুলো বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। কারণ, এই বিধি কার্যকর হলে নতুন কোম্পানীসহ মাঝারি ধরনের কোম্পানীকেও দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক-কর্মচারি আনতে বড় ধরনের ধাক্কায় পড়তে হবে। বাড়তি বেতন প্রদান করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না বিধায় তারা প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খাবেন দক্ষ লোকের অভাবে। নয়া এই বিধি কার্যকর হতে ৬০ দিনের মত সময় লাগবে। এরইমধ্যে ভিসা রীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। যে কাজের জন্যে আসতে আগ্রহী, সেই বিদেশীকে ঐ কাজের অভিজ্ঞতার ডিগ্রি থাকতে হবে। কোন টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট/কলেজের ডিগ্রিই যথেষ্ঠ হবে না বলে রীতি পরিবর্তন করা হতে পারে। উচ্চ দক্ষতার জ্ঞান কীভাবে তারা অর্জন করেছেন সে ব্যাপারেও বিবরণী দিতে হতে পারে আবেদনপত্রে এবং ভিসার জন্যে ইন্টারভিউর সময়েও তেমন প্রশ্নের সম্মুখীন করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, এইচ-ওয়ান বি ভিসায় আগতরা মূলত: তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরেই কাজ করেন। তারা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে চাকরি করেন। এছাড়া স্থপতি, হিসাব বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, চিকিৎসা-বিজ্ঞানী, শরির চর্চাবিদসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ভিসা পেয়ে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে গিয়ে হাসপাতাল/ক্লিনিকে চাকরি করার মানসিকতা অনেক আমেরিকান চিকিৎসকেরই নেই। সে অভাব দূর করতে বিদেশীরা এসে থাকেন। এরা চাকরির ফাঁকেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর স্পন্সরে গ্রীণকার্ড লাভ করেন। এমন গ্রীণকার্ডধারীর সংখ্যাও অনেক।
ট্রাম্পের নয়া রীতির প্রভাব বিশ্লেষণকালে নিউইয়র্ক টাইমস উদাহরণসহকারে উল্লেখ করেছে, পেনসিলভেনিয়ার পিছিয়ে থাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ক্লিনিকে নয়া চিকিৎসকের বার্ষিক বেতন হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার ডলার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার। নয়া রীতি অনুযায়ী বিদেশী চিকিৎসক আনা হলে তার বেতন শুরু করতে হবে এক লাখ ৯৫ হাজার ডলার থেকে দু’লাখ ডলার করে। ফিলাডেলফিয়ার ইমিগ্রেশন এটর্ণী উইলিয়াম এ স্টক বলেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসকদের চাকরির ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে এবং সেজন্যে তারা বেতনও বেশী পাবেন। অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ হাসপাতাল/ক্লিনিকের সুপারভাইজারের চেয়েও বেশী বেতন পাবেন নতুন চাকরিতে যোগদানকারি চিকিৎসকরা। এরফলে অনেক হাসপাতাল/ক্লিনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন চিকিৎসক বিদেশ আনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হবার আশংকা তৈরী হবে ট্রাম্পের এই বিধির পরিপ্রেক্ষিতে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল