নাইজেরিয়ার আবুজায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ‘কমার্শিয়াল ডিসপ্লে রুম’ উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং নাইজেরিয়ার শিল্প, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী অতুনবা রিচার্ড আদেনিয়ী আদেবায়ো ৩০ অক্টোবর যৌথভাবে ‘কমার্শিয়াল ডিসপ্লে রুম’ উদ্বোধন করেন
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগদান করেন এবং নাইজেরিয়ার মন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উভয় মন্ত্রী হাইকমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং বলেন যে এটি বিদেশিদের বিশেষত, নাইজেরিয়ার আমদানিকারক এবং বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য এবং বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানে ভূমিকা রাখবে।
উভয় দেশের মন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সাম্প্রতিক প্রবণতার কথা তুলে ধরে দুদেশের স্বার্থে বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপরে জোর দেন।
উল্লেখ্য, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১১.২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১৮-১৯ অর্থবছর) থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৪.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে (২০১৯-২০ অর্থবছর) দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরো বলেন, এ শুভ উদ্যোগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় এক নতুন মাত্রা যোগ করলো। আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী নাইজেরিয়ার সাথে ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করার ওপর তার গভীর আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। টিপু মুনশি সাম্প্রতিক সময়ে স্বাক্ষরিত কয়েকটি সমঝোতা স্মারকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নাইজেরিয়ার মন্ত্রী অতুনবা রিচার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের নাইজেরিয়ায় পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য খাতে যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে নাইজেরিয়ার মন্ত্রী উল্লেখ করেন যে নাইজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং আগোয়া-এর সদস্য হওয়ায় আফ্রিকায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নাইজেরিয়ায় তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা লাভ করতে পারবেন।
‘কমার্সিয়াল ডিসপ্লে রুম’ উদ্বোধনের পর উভয় মন্ত্রী ‘নাইজেরিয়ান-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্স এবং ‘নাইজেরিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ফোরামের উদ্বোধন করেন।
চেম্বার এর সভাপতিদ্বয় দুদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠান শেষে উভয় মন্ত্রী পরস্পরকে দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তারা আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, নাইজেরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাইজেরিয়ার বিভিন্ন চেম্বার ও বাণিজ্যিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের ‘কমার্শিয়াল ডিসপ্লে রুম’ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রপ্তানিযোগ্য পণ্যের পসরা দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওষুধ, সিরামিক পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, তৈরি ও নীট পোশাক, হস্তশিল্প, চা, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক দ্রব্য এবং কৃষিজাত পণ্য।
ডিসপ্লে রুমে মিশনের নিজস্ব সংগ্রহ ছাড়াও বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি কোম্পানি কর্তৃক উপহার স্বরূপ প্রদত্ত রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক তথ্যসহ বাংলাদেশের সম্ভানাময় ব্যবসা-বিনিয়োগ, পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ে প্রকাশনা-পুস্তক-সিডি ইত্যাদি স্থান পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ডিসপ্লে রুমের সম্মুখভাগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর প্রকাশনাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদির ওপর প্রকাশনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’ অনুসরণের ধারাবাহিকতায় নাইজেরিয়ার বিভিন্ন মেলায় (২০১৯, ২০২০) সক্রিয় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ হাইকমিশন এযাবৎ ৬টি শ্রেষ্ঠ অংশগ্রহণকারীর পুরস্কার পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই