তিনজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি যারা যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়াতে আইএসে যোগ দিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে ধারনা করা হয়, তাদের বাতিল হওয়া ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আইনী লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালতে এক ট্রাইবুনাল তাদের বাতিল হওয়া নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছ। এই সংবাদটি করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম মেট্রো।
নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া নাগরিকদের পূর্ণ পরিচয় দেয়া হয়নি, তবে সংবাদে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে তাদের যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে। মানে তারা ব্রিটিশ ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহন করেন।
এই রায় এমন সময় দেয়া হলো যখন গতমাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আইএস বধূ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আইনী লড়াইয়ের জন্য দেশে ফিরতে পারবেন না বলে রায় দেয়া হয়েছে।
মেট্রোর রিপোর্টে নাগরিকত্ব বহালের রায় পাওয়া তিনজন ব্রিটিশ বাংলাদেশীকে সি থ্রি, সি ফোর এবং সি সেভেন বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে প্রথম দুইজনের নাগরিকত্ব ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাতিল করা হয় জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি বিবেচনা করে।
সি সেভেন, যে ব্রিটিশ বাংলাদেশী বাবা-মায়ের সন্তান হলেও তার জন্ম বাংলাদেশে ছিলো, তবে জন্মসূত্রে সে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে এবং ২০১৫ সালের পর কোন এক সময় আইএসএ-তে যোগ দেয়। এই অপরাধ ও জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি দেখিয়ে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে।
মামলা চলাকালীন সময়ে হোম অফিস বলছিলো, যে সময় এদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তখন তারা স্টেইটলেস বা দেশহীন ছিলেন না। কিন্তু এই তিনজনের আইনজীবি স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন সংক্ষেপে এসআইএসিকে বলেন, যখনই এই তিনজনের বয়স ২১ হয়েছে, ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে। যখন হোম অফিস তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করে তখন আসলে তাদের দ্বিতীয় কোন দেশের নাগরিকত্ব ছিলো না। এই বাতিল আইনসম্মত নয়।
আদালতে বিচারক মি. জাস্টিস চেম্বারলেইন বলেন, উল্লেখিত ৩ জন প্রমান করেছে যে যখন তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হয় তখন তাদের অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব ছিলো না।
বিচারক রায় ঘোষণার সময় আরো বলেন, সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন কাজ করতে পারেন না যা একজনকে রাষ্ট্রহীন করে ফেলে। এই রায়ের ফলে তাদের নাগরিকত্ব ফেরত পাবে।
হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ডিরেক্টর মায়া ফাও বলেছেন, সরকারের উচিত যেসব মহিলা এভাবে আইএসএ যোগ দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা, কারণ তারা হয়তো মানব পাচারের শিকার হয়েছে।
এই রায়ের ফলে শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল হতে পারে। তবে যারাই এইভাবে দেশ ছেড়ে গিয়েছেন তারা যুক্তরাজ্যে ফিরলে অবশ্যই তাদেরকে আইনী মোকাবিলা করতে হবে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে জেলও হতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল