১৯ অক্টোবর, ২০২১ ২০:২১

যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটে শেখ রাসেল দিবস উদযাপিত

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটে শেখ রাসেল দিবস উদযাপিত

১৮ অক্টোবর সোমবার ছিল বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী তথা ‘শেখ রাসেল দিবস’। তা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশ কন্স্যুলেট যথাযথ মর্যাদায় পালন করে। 

এ উপলক্ষে ডিসিতে শেখ রাসেলকে স্মরণ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান এবং মিনিস্টার কন্সুলার হাবিবুর রাহমান।

রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি শহীদ শেখ রাসেলসহ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত যা কিছু কুচক্রী মহল বিনষ্ট করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি এরকম ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সবার প্রতি আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ রাসেল এর স্মৃতি অবলম্বনে নির্মিত একটি  প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।  অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শেখ রাসেল এবং পঁচাত্তরের আগস্টের নারকীয় হামলায় শহীদ হওয়া সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে একটি বিশেষ প্রার্থনা পরিচালিত হয়।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন 
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে স্থানীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই শহীদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর শেখ রাসেলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর শেখ রাসেল-এর জীবন বিষয়ক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি শহীদ শেখ রাসেল এর জন্ম দিবসকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশের শিশু-কিশোররা শেখ রাসেল সমন্ধে আরও জানতে পারবে যা তাদেরকে মানবতাবাদী ও অধিকারবোধ সম্পন্ন ভবিষ্যত নাগরিকে পরিণত করবে। শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত বই ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ পড়ার জন্য প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে জাতির পিতার বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যাকান্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ঘাতকেরা নিষ্পাপ ও কোমলমতি শিশু রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের পালিয়ে থাকা খুনীদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি যে আহবান জানিয়েছেন তা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বিদেশী পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার-আওতায় আনতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
দিবসটি স্মরণে মুক্ত আলোচনা পর্বে মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ অংশগ্রহণ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের মাধ্যমে শেখ রাসেল এর পবিত্র স্মৃতি আজীবন সকলের মাঝে বেঁচে থাকবে যা শিশু-কিশোরদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করবে। কেক কাটার মাধ্যমে শহীদ শেখ রাসেল এর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি হয়।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট
রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ এর প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ শেখ রাসেল এর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান এবং কনস্যুলেটের কর্মকর্তাবৃন্দ। শহিদ শেখ রাসেল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের শহিদ সদস্যবৃন্দ, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য সকল শহিদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং শেখ রাসেল স্মরণে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা ও তার পরিবারের অন্য শহিদ সদস্যসহ সকল শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল তার বক্তব্যে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, শেখ রাসেল তার পরিবারের এবং বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহের ছিলেন। শিশু রাসেলও ঘাতকদের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি। তিনি বাংলাদেশী-আমেরিকান ও নতুন প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেলের পরিচিতি বিশেষভাবে উপস্থাপনের আহবান জানান। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত শেখ রাসেলসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের নিহত সকল সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। নিউইয়র্কে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস এর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, স্বাগতিক সিটির বিধি-বিধান প্রতিপালন করে কনস্যুলেটে এই দিবস উদযাপন করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর