১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২০:২৬

এথেন্সে একদিকে চলছে বৈধকরণ, অন্যদিকে ধরপাকড়

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস

এথেন্সে একদিকে চলছে বৈধকরণ, অন্যদিকে ধরপাকড়

গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রবাসীদের অবহিতকরণ করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের অস্থায়ীভাবে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও এর নানা শর্ত থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন প্রবাসীরা। গ্রিক সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ রয়েছে, এসব অভিবাসীদের সিজনাল কর্মী হিসেবে ৫ বছরের জন্য বৈধতা দেওয়া হবে, পরে ফিরে যেতে হবে দেশে। এরই মাঝে বছরে ৯ মাস গ্রিসে, বাকি ৩ মাস বাংলাদেশে থাকতে হবে। যেতে পারবেন না ইউরোপের অন্য দেশে, নিতে পারবেন  না পরিবার। এসব শর্তের পরও বৈধতার জন্য নিবন্ধন করছেন অনেকেই।

অপরদিকে অনিয়মিতদের ধরপাকড় অভিযানও অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। নিবন্ধন করতে মানোলদাসহ এথেন্সের বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে দূতাবাস যাওয়ার পথেও আটক হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা বাংলাদেশিরাও রয়েছেন ‘ডিপোর্ট’ আতঙ্ক ও হতাশায়।

জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এসময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রতি বছরে ৪ হাজার করে বাংলাদেশি কর্মীকে মৌসুমী কাজের ভিসা দেয়া হবে এবং গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এবার অনিয়মিত বাংলাদেশিদের আবেদনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে গ্রিক সরকার। যারা ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন, তারা এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কিন্তু এই বৈধতার আইনে বেধে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু শর্ত। একজন বাংলাদেশিকে বছরে ৯ মাস গ্রিসে কাজ করে বাকি তিন মাস থাকতে হবে বাংলাদেশে। এসব বাংলাদেশিদের ৫ বছর পর নিজে দেশে ফিরে যেতে হবে। তারা সেখানে নিতে পারবে না পরিবার। এমনকি গ্রিস সেঞ্জেনভুক্ত দেশ হলেও এসব বাংলাদেশিরা এই কার্ড নিয়ে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন না বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়।

এসব নানা শর্তের পরও সিংগভাগ অনিয়মিত বাংলাদেশি এই প্রক্রিয়ায় বৈধতা নিতে আগ্রহী। কারণ অনেকেরই এখানে আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে ৬/৭ বছর ধরে পরিবারের কাছে যেতে পারছেন না। আবার অনেকেই মনে করছেন পুলিশের হাতে আটক হওয়ার চেয়ে এই বৈধতা নেওয়া উত্তম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৬ মাস। তাই নিবন্ধন করতে প্রবাসীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূতাবাস প্রাঙ্গনে।

একদিকে চলছে বৈধকরণ প্রক্রিয়া, অপরদিকে চলছে ধরপাকড়। বৈধ হওয়ার জন্য অনেকেই দূতাবাসে যাওয়ার পথে আটক হচ্ছেন। গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশাল একটি অংশ অনিয়মিত হওয়ায় মানোলদা গ্রামে বসবাস করছেন। সেখানে কৃষি কাজ নিয়োজিত রয়েছেন তারা। বৈধতার আওতায় আসতে হলে প্রথমেই যেতে হয় দূতাবাসে। কিন্তু রাস্তায় পুলিশ ধরপাকড় করে। অনেকেই আর দূতাবাসে পৌছাঁতে পারেন না। তাই অনিয়মিত প্রবাসীদের মাঝে এক আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অপরদিকে কয়েক শতাধিক বাংলাদেশি গ্রিসের বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রয়েছেন। তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং মুক্ত করার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা চলছে। যারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন, তাদের সবাইকে বৈধতার আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রবাসীদের অবহিতকরণ করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সভায় জানানো হয়, দূতাবাস নিবন্ধনকারীদের সকল ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাই করে গ্রিক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাচ্ছে, গ্রিক সরকার উক্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করে তালিকা তাদের অনলাইন সিস্টেমে আপলোড করলে একজন অনিয়মিত বাংলাদেশি গ্রিক সরকারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করতে পারবেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর