বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সংঘাত, নিদারুন বিভাজন এবং মহাসংকটের মধ্যেও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্বজুড়ে সবাইকে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
‘বার্ষিক শান্তি বেল’ অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে মহাসচিব সকলকে সতর্ক করে দিয়ে গভীর উদ্বেগের সাথে বলেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, বৈষম্য বাড়ছে এবং নয়া প্রযুক্তিকে মানবতার কল্যাণে ব্যবহারের পরিবর্তে মারনাস্ত্রে পরিণত করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মহলকে অবশ্যই এহেন অবস্থার অবসানে আরো জোরালো ঊমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
গোটাবিশ্বে অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসানে সহযোগিতার দিগন্ত প্রসারিত করার অভিপ্রায়ে আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে মহাসচিবের এই আহবানের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করছেন ঊটনীতিকরা।
উল্লেখ্য, এ মাসের শেষের দিকে বিশ্বনেতারা নিউইয়র্কে জড়ো হবেন ‘নিরাপদ ভবিষ্যত’ রচনার জন্য জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য। মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তা, সামরিক প্রযুক্তি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা নিয়েও খোলামেলা আলোচনার পর চ্যালেঞ্জসমূহ অতিক্রমের কৌশল অবলম্বনের ওপর জোর দেয়া হবে এ শীর্ষ সম্মেলনে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের একটি সুযোগ রয়েছে-সংক্ষেপে বলা যায় যে, আমাদের অবশ্যই শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আরো উল্লেখ্য, ২১ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’, এ উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। দিবসটিতে সকলে সংকল্প গ্রহণ করবে শান্তি এবং ন্যায়-বিচারের জন্য আত্মনিয়োগে এবং বছরের প্রতিটি দিনকে এমন সংকল্পে উজ্জীবিত রাখার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো সকলে। ১৯৮১ সালে এই আন্তর্জাতিক দিবসটি নির্ধারিত হলেও তার দু’ দশক পর ২০০১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতীয়ভাবে এবং গোটা জনগোষ্ঠির মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে। একইসাথে সারাবিশ্বেই যুদ্ধ-বিরতির আহ্বানও উচ্চারিত হয়।
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট ফিলেমন ইয়াং এ সময় বক্তব্যকালে বলেন, ইউক্রেন থেকে গাজা, সুদান, মিয়ানমার, হাইতি এবং অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ-সংঘাত চরমে উঠেছে। এমন পরিস্থিতির অবসানে জাতিসমূহের মধ্যে আস্থার ভিত পুনপ্রতিষ্ঠা এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা জাগ্রত রাখতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। ফিলেমন ইয়াং বলেন, আসুন আজ আমরা শান্তির বেল বাজাই এবং গোটাবিশ্বকে জানিয়ে দেই শান্তির প্রতিষ্ঠায় আশার বাণী। এলক্ষ্যে সংলাপ এবং সংযমের বিকল্প নেই।
আর এর মধ্যদিয়েই আমরা টেকসই উন্নয়নের অভিযাত্রা ত্রান্বিত করতে পারবো এবং সর্বত্র সকলের মানবিক মর্যাদার জন্য সর্বজনীন সম্মান নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো-যোগ করেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন