২৮ মে, ২০১৯ ১৬:৩৬

মোবাইল আর্থিক সেবা

ইসমাইল হোসাইন:

মোবাইল আর্থিক সেবা

প্রতীকী ছবি

অজ্ঞতা-সরলতা-লোভ এই তিনেই সব। ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে যত ধরনের প্রতারণা তার প্রায় সবগুলোর পেছনের অনুঘটকই এই তিনটির মধ্য থেকেই। সারা পৃথিবী জুড়ে ডিজিটাল আর্থিক খাতের প্রতারক চক্ররাও এই তিনটি হাতিয়ারকেই সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে সাধারণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নেই। 

মোবাইল আর্থিক খাতে বাংলাদেশের যে অসাধারণ সাফল্য তা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। একবারে প্রান্তিক জনও মোবাইল আর্থিক সেবার কল্যানে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির যাত্রায় যুক্ত হয়েছেন। মোবাইল আর্থিক লেনদেন এখন বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের মানুষের জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে। 
তবে এই অসাধারণ সাফল্যে ছন্দপতনে ব্যস্ত একদল সংগঠিত প্রতারক চক্র। যারা প্রায়শই অজ্ঞতা-সরলতা-লোভ অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে প্রতারণা করছে সাধারণ মানুষকে। বিষয়টি একটু ব্যাখা করা যাক।

প্রযুক্তি নির্ভর লেনদেন মানেই জটিল কিছু। এটা সাধারণের বোঝাপড়ার মধ্যে আসবে না। প্রযুক্তি ভীতি থেকে এমন অমূলক ধারনা পোষণ করেন অসংখ্য মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহারকারী। ফলে তাকে কেউ যখন ফোন দিয়ে বলে আপনার একাউন্টের তথ্য দিন বা আপনার একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা তথ্য আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে বিস্তারিত জানান, তখন অনেক গ্রাহকই জটিল বিষয় মনে করে বা না যাচাই করেই নিজের একাউন্টের গোপন সব তথ্য শেয়ার করেন এবং প্রতারকের কাছে মূল্যবান অর্থ খোয়ান। অজ্ঞতা আর অমূলক ভীতি তাকে এই বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। 

আপনার মোবাইলে ভুল করে টাকা চলে গেছে, আমার আত্মীয় অসুস্থ, আমি বিপদে পড়েছি, টাকার খুব প্রয়োজন আপনি ছাড়া কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না-এমন হাজারো ছলনার আশ্রয় নিয়ে সরল মানুষগুলোর আর্থিক সেবা থেকে তাকে দিয়েই টাকা সরিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। আগের দিনে বাড়ির দরজায় বিপদগ্রস্ত সেজে যারা সাহায্য নেওয়ার নামে প্রতারণা করত তারা এখন মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপদগ্রস্ত সেজে প্রতারণা করে। শিক্ষিত, জানেন, বোঝেন এমন গ্রাহকরাও সরলতা আর অসচেতনতার কারণেই কেবল প্রতারিত হচ্ছেন এমন উদাহরণও পাওয়া যায়। মোবাইল প্রযুক্তি যেমন সাধারণের আর্থিক লেনদেনে সক্ষমতা বাড়িয়েছে তেমনি প্রতারকদেরও দিয়েছে প্রতারণার নতুন ক্ষেত্র। 

লোভ- এটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে ভয়াবহ হাতিয়ার প্রতারক চক্রের। লটারি জিতেছেন, চাকরি পেয়েছেন, ভাগ্য পরিবর্তনের অসাধারণ তদবির/দোয়া পাবেন, বিনিয়োগ করে দ্বিগুন টাকা ফেরত পাবেন- এমনই নানা ধরনের রঙিন প্রলোভনে মোবাইল আর্থিক লেনদেন ব্যবহারকারী গ্রাহককে প্রতারিত করে টাকা সরিয়ে নেয় প্রতারকরা। 

অথচ গ্রাহক খানিকটা সচেতন হলেই এসব প্রতরণা এড়িয়ে চলতে পারা যায় খবু সহজেই। বাংলাদশের মোবাইল আর্থিক সেবাগুলো প্রযুক্তি নির্ভর সেবা যা গ্রাহককে দিয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নিজের লেনদেনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। এসব সেবা পিন নম্বর দিয়ে নিরাপদ করা হয়েছে যা গ্রাহক ছাড়া আর কেউ জানবেন না। প্রযুক্তিও পিন ছাড়া কোন লেনদেন হতে দেবে না। ফলে পিন নম্বর গোপন রাখলে কোনভাবেই একটি একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে টাকা চলে যাওয়া সম্ভব না। আমরা যেমন আমাদের মানিব্যাগ বা পার্স কিংবা সিন্দুক/আলমারীর চাবি স্বযত্নে রাখি, তেমনি পিন নাম্বারটিও কোনভাবেই কারো সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। যখনই কেউ পিন নাম্বারটি জানতে চাইবে, সে যে পরিচয়েই তা জানতে চাক না কেন, বুঝতেই হবে তার উদ্দেশ্যটি মহৎ নয় এবং সে একজন সম্ভাব্য প্রতারক।  

যেকোন অফার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একটু ভাবা জরুরি। কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কেউ টাকা বিলিয়ে দেয় না। ফলে আপনাকে লটারির জিতে টাকা দেওয়ার অফার যেটা দেয়া হল তা খতিয়ে দেখুন। শর্ত হিসেবে মোবাইলে টাকা যারা পাঠাতে বলছে আগে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। 

যে কারো জন্য অর্থ বা টাকা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ফলে নগদে সেই টাকা কাউকে দেওয়ার আগে আপনি যেমন সব দিক খতিয়ে দেখেন মোবাইলে আর্থিক সেবায় টাকা কাউকে পাঠানোর আগে সব দিক খতিয়ে দেখবেন, নিজের একাউন্টের ব্যালেন্স আগে পরীক্ষা করে নেবেন। তাছাড়া নিজের ওয়ালেটের চুরি ঠেকাতে যেমন সাবধানে থাকেন ডিজিটাল ওয়ালেটের চুরি ঠেকাতেও তেমনি সাবধানতা জরূরী। 

সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তি সহজ হয়েছে। সাধারণের মধ্যে এর ব্যবহারও বেড়েছে। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সকলকে প্রযুক্তি সচেতন হতে হবে। একজন সচেতন গ্রাহক চাইলেই মোবাইল আর্থিক সেবার মত এত ব্যবহার-উপযোগী এবং নিরাপদ সেবার পুরো সুবিধাটুকু নিয়ে আর্থিক লেনদেনে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবি


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর