২৩ জুন, ২০১৯ ১৬:০৮

প্রবাসী রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নয়, ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার দাবি

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্

প্রবাসী রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নয়, ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার দাবি

গত ১৩ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তা প্রদানের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের বিপরীতে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেটে এমন প্রস্তাবে প্রবাসীদের মাঝে উৎসাহ ও আনন্দ বিরাজমান একথা যেমন সত্য, সাথে সাথে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা বিষয়টি নিয়েও বৈষম্যমূলক, অবহেলা ও অপমানজনকও মনে করেন প্রবাসীরা। 

এছাড়াও হতাশাজনক চিত্রও আছে প্রবাসীদের মাঝে। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রণোদনার বিষয়টিকে শুভসূচনা মনে করি এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দুই শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টিকে অযুক্তিক ও বৈষম্যমূলক ও হতাশাজনক বলে মনে করি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার আগে জাতীয় আয়ে প্রবাসীদের অবদান নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা প্রয়োজন-

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটি বিশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসে কাজ করে। তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের জিডিপিতে অবদান ১০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে গত ১১ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। গত ১ মাসে বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৭৫ কোটি ডলার।

তবে এর বাইরেও প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি, অসচেতনতা বা অসাধু হুন্ডির কারবারিদের প্ররোচণায় হুন্ডির মাধ্যমে দেশে বড় অংকের রেমিটেন্স পাঠায়।

জিডিপিতে প্রবাসীদের ১০ শতাংশ অবদান ছাড়াও এক কোটি বিশ লাখের অধিক প্রবাসী প্রবাসে বসবাসের কারণে দেশের সেবাখাত গুলো যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ ও টান্সপোর্ট, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ অন্যান্য সরকারি সেবা সমূহ ব্যবহার করে না। অথচ এসব সেবাখাত সমূহের বিশাল বরাদ্দ ও ভর্তুকি দেশের সব নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু এই বিশাল বরাদ্দের প্রায় (মোট জনসংখ্যার) ১০ শতাংশ প্রবাসী নাগরিকদের ব্যবহার করতে হয় না। 

এছাড়াও প্রতিটি প্রবাসীদেরকে বিশেষ করে মধ্যপাচ্যের প্রবাসীদের ৯৯ শতাংশ পরিবার দেশে থাকে বিদায় প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠাইতে হয় এবং সে টাকা গ্রাম থেকে শহর ও মহানগরে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব, পোশাক সামগ্রী ক্রয়, সন্তানদের শিক্ষা, যাতায়াত, চিকিৎসা ও শিশুখাদ্য ক্রয়ে ব্যয় হওয়াতে গ্রাম থেকে মহানগরের খুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বাণিজ্য সচল ও গতিশীল করার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখছে।

এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনেও গ্রামে প্রবাসীদের অব্যবহৃত জায়গা জমিগুলো গ্রামাঞ্চলের ভূমিহীন বর্গাচাষীদের মাঝে নাম মাত্র মূল্যে লীজ দেয় অনেক প্রবাসী। সেই কারণে কর্মসংস্থানেও বিশাল অবদান রাখছেন প্রবাসীরা।

আরো বলতে গেলে প্রতিটা প্রবাসী দেশে যাওয়া-আসায় টিকেট ক্রয়ে বিমানবন্দর ব্যবহারে সরকারি খাতে একটা বিশাল অংকের টেক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। এইসব বিষেয়গুলোকে সামগ্রীকভাবে বিবেচনায় নিলে জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপিতে আরো ১০ শতাংশের মত বিশাল অবদান রাখছেন বলে ধারণা প্রবাসীদের।

প্রবাসীদের অবদানের উপরোক্ত বিষয়গুলোকে প্রণোদনার আনুপাতিক বিবেচনায় নিতে হলে বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনের আরেক খাত রপ্তানি খাতের প্রস্তাবিত ভর্তুকি ও প্রণোদনার চিত্রও তুলে ধরতে চাই-

প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরে রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি বাবদ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রপ্তানিতে বর্তমানে ২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ২৬ শ্রেণিতে বিভিন্ন হারে নগদ ও ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া হয়।

রেমিট্যান্স অর্জনের উপরোক্ত দুই খাতের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় প্রবাসীদের প্রেরণকৃত রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ প্রণোদনা অগ্রহণযোগ্য, অযৌক্তিক, অবহেলা ও অপমানজনক। প্রবাসীরা নিজেদের অনেক মৌলিক মানবিক অধিকার গুলোকে বিসর্জন দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি যে বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছে তার বিনিময়ে রাষ্ট্রে ও সরকারের নিকট কোন দয়া-দাক্ষিণ্যের প্রত্যাশা করে না। রাষ্ট্র ও সরকারের নিকট প্রত্যাশা করে প্রবাসীদের অবদানের ন্যায়ভিক্তিক অধিকার।

তাই আমি মনে করি বাজেটে দুই শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাব সংশোধন করে শুভ সূচনা হিসেবে ১০ শতাংশ প্রণোদনার দেওয়ার প্রস্তাব মহান জাতীয় সংসদে পাস করা হোক।

এই লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও সকল সংসদ সদস্যগণের প্রতি বিনীতভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সবিনয়ে আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক : কুয়েত প্রবাসী ও সদস্য পরিকল্পনা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় সম্বনয়ক ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর