২৮ মার্চ, ২০২০ ১২:২৩

জীবন যখন শুকায়ে যায়

সুমনা আহম্মেদ

জীবন যখন শুকায়ে যায়

তিন সপ্তাহ আগেও জীবনটা অন্যরকম ছিল। আমরা থাকি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডার লাস ভেগাসে। গত  ১৩ মার্চ নেভাডাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। হঠাৎ করেই আমাদের পরিচিত জগৎটা পাল্টে যেতে শুরু করলো। পৃথিবীর বিনোদনের রাজধানী লাস ভেগাস যেখানে ২৪/৭ সবকিছু খোলা থাকে, যে শহর কখনো ঘুমায় না, যেখানে হোটেল/রিসোর্ট/ক্যাসিনোগুলো কোন বিশেষ দিনেও এক মিনিটের জন্যে বন্ধ হয় না—আজ সব বন্ধ। চারিদিকে ভুতুড়ে নিরবতা। 

কাল সন্ধ্যায় ড্রাইভ করে ভেগাসের স্ট্রিপ দেখতে গিয়েছিলাম, সব কিছু বন্ধ... রাস্তার পাশে মাঝে কিছু পুলিশের গাড়ী লাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কোথাও কেউ নেই। কি ভয়াবহ নিরবতা! 

এখনো কেউ সত্যি কেউ জানে না যে আবার কবে লাস ভেগাসের স্ট্রিপ বা ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ার জনমুখরিত হবে! আবার কবে আলোয় আলোয় ঝলমল করে উঠবে! কি আশ্চর্য ক্ষমতাবান অথচ সামান্য ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস-সারা পৃথিবীর সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের চিরপরিচিত পৃথিবীকে কী অপরিচিত করে দিয়েছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে। সারাবিশ্বের সব ক্ষমতাবান দেশগুলো কি অসহায় হয়ে পড়েছে। ইতালির প্রেসিডেন্টের অসহায় অশ্রুসজল চোখ...নিউ ইয়র্কের মেয়রের আকুতি, আমাদেরকে প্রতি নিয়ত মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা কত অসহায়... কত ক্ষুদ্র! 

এতদিন আমরা সবাই মিলে প্রকৃতির প্রতি যে অন্যায় অত্যাচার করেছি, প্রকৃতি আজ তার প্রতিশোধ নিচ্ছে কি? প্রকৃতি কি আজ নিজের হাতেই এই পৃথিবীকে আবার বাসযোগ্য করে তুলছে? ভেনিসের পানি এখন ক্রাইস্টাল ক্লিয়ার..ঢাকার বাতাসের মান অনেক উন্নত হয়েছে...কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ডলফিন মনের আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছে এই মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই—এসব কি তারই ইঙ্গিত বহন করে না?

আমার কেন জানি মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে কোন ‘সাইফাই’ মুভি দেখছি...যেখানে এক অদৃশ্য শক্তিধর শত্রু সারা পৃথিবীকে আক্রমণ করেছে। আর সমগ্র পৃথিবী তাদের সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক হয়ে সেই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যেখানে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই...টিকে করার লড়াই। যোগ্যতমের টিকে থাকা।

এই ভয়ঙ্কর সময়ে একটাই স্বস্তি যে সারা পৃথিবীর শত্রু এখন একটাই কভিড-১৯। এখন সবাই ব্যস্ত এই এক শত্রুর মোকাবেলা করতে। অন্য কারো পেছনে লাগার এখন আর সময় নাই। আমরা আবার back to basic মোডে ফিরে গিয়েছি। যেখানে শুধু মৌলিক চাহিদাগুলো পুরণ করে কোন মতে জীবিত থাকাটাই এখন বড়। এই ভয়ঙ্কর সময় পার করে যারা বেঁচে থাকবে তারাই জয়ী হবে। প্রকৃতি হয়তো অপ্রয়োজনীয় সবকিছু পরিছন্ন করে একটা নতুন পৃথিবী তৈরি করবে...যেখানে বাতাস হবে দূষণ মুক্ত, যেখানে সমুদ্রে থাকবে না জঞ্জাল...যেখানে মানুষে মানুষে থাকবে সৌহার্দ্য। থাকবে না ভেদাভেদ। যেখানে শুধু হবে মানবতার জয়গান-সেই সুন্দরের প্রত্যাশায় রইলাম।

জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানবতার।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর