শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অন্যরকম চায়ের দোকান সন্ধ্যামালতি

উদ্যোক্তা দুই বন্ধু নিজেরাই প্রতিদিন বাগানের পরিচর্যা করেন। পরিবেশবান্ধব ও নানারকম চায়ের সমারোহ রাখতেই এ দোকান তৈরির উদ্যোগ নেন তারা...

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

অন্যরকম চায়ের দোকান সন্ধ্যামালতি

চারপাশে ফুল আর বনাদি গাছের সমাহার। দূর থেকে দেখে মনে হবে নার্সারি। যে কেউ মনে করতে পারেন এখানে গাছের চারা বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল ও কনটেইনারে চমৎকার ডেকোরাম করে ফুলদানি তৈরি করা। কিন্তু কাছে গেলেই চোখে পড়বে অন্য চিত্র। টুংটাং শব্দ আর মানুষের গুঞ্জন। চমৎকার এক নার্সারির ভিতরে চায়ের দোকান। রয়েছে নানারকম চায়ের সমাহার। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে কাঁচা আম, মরিচ, তেঁতুল- এমনি হরেক রকমের চা। আর এরকম পরিবেশে মজার একটি চা খেতে দূর-দূরান্ত থেকে খদ্দের আসেন। নেত্রকোনা শহরের অদূরেই বিজিবি ক্যাম্পের কাছে ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই এ দোকান। নাম সন্ধ্যামালতি। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শতাধিক খদ্দের এখানে আসেন চায়ের স্বাদ পেতে।

১৬ রকমের চা রয়েছে এখানে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত। কফিও মেলে একই দামে। অর্থাৎ চা-প্রিয় মানুষ আর আড্ডাবাজদের জন্য খোলা জায়গায় পরিবেশবান্ধব একটি চমৎকার জায়গা।

স্থানীয় নুর-উদ্দিন তার বন্ধু শরীফ মিয়াকে নিয়ে এ চায়ের দোকান দেন। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। নার্সারি ভেবে চারা কেনার ইচ্ছে পোষণ করে কাছে যেতেই দেখা যায় সবুজে মোড়ানো একটি চায়ের দোকান। দোকানের মালিক নুর-উদ্দিন ও শরীফ মিয়া প্রতিদিন বাগানের পরিচর্যা করেন। পরিবেশবান্ধব এবং রকমফের চা বিক্রির জন্য তাদের এ উদ্যোগ। চায়ের দোকানের এমন ডেকোরেশন নিয়ে তারা বলেন, ইউটিউবে দেখে তারা এমন পরিবেশবান্ধব চায়ের দোকানের চিন্তা-ভাবনা করেন। শুরুতে এমন গাছ ছিল না। ধীরে ধীরে এমন পরিবেশ তৈরি করতে পেরে তারা নিজেরাও তৃপ্ত। সেই সঙ্গে তাদের এখানে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ চায়ের স্বাদ নিতে আসেন। কোনো প্রচারের প্রয়োজন হয়নি। এ স্টলের ওপরে নির্ভর করে দুজনেরই সংসার চলে।

তারা আরও জানিয়েছেন, মানুষ অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এখানে। মোটরসাইকেল যাদের আছে তো আছেই। এ ছাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ করেও রিকশা এবং অটো দিয়ে মানুষ আসেন ১৫ থেকে ২০ টাকার এ চা-কফি খেতে। আমরাও তাদের সেই চাহিদা এবং ভালো লাগায় শামিল হয়ে খুব আনন্দিত। দেখা যায়, অনেকেই মরিচের চা খেতে আসেন। আবার কেউ কেউ তেঁতুলের। সব চা-ই শরীরের জন্য ভালো কাজ করে। হার্ট ভালো রাখে তেঁতুল এবং মরিচের চায়ে। প্রেসার কম থাকে। কোনোটারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যারা একবার আসেন তারা আবার দলবদ্ধ হয়ে আসেন। আমাদেরও ভালো সংসার চলে। এ জায়গায়টাও পড়ে ছিল এমনিতেই। এর জন্য মালিককে ভাড়া দিই। তিনিও কিছু না কিছু পাচ্ছেন এখন। সব মিলিয়ে মানুষও এখানে এসে আড্ডা দিতে বা ঘুরে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমরাও চাই মানুষের আনন্দের সঙ্গে আমাদের রুটি-রুজি মিশে থাকুক। আনন্দে বেঁচে থাকা জরুরি। অনেক বেশি খেয়ে-পরে বেঁচে থাকায় আনন্দ কম থাকে বলেও জানান দুই বন্ধু।

 

 

সর্বশেষ খবর