রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য মানুষের জীবন সহজ করেছে

মোহম্মদ নুরুল আফছার, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক. ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য মানুষের জীবন সহজ করেছে

পেশাজীবী, কর্মজীবী, গৃহিণী অথবা গৃহকর্মী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হলো, আমাদের কর্মব্যস্ততা। আর এ কর্মব্যস্ত জীবনে সময়ের ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের সব প্রধান শহর ও উপশহরের প্রায় প্রতিটি পরিবারই বিস্তৃত ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। যেমন আমাদের দিনের শুরুটা হয় টোস্টারে রুটি তৈরি এবং ওয়াশিং মেশিনে নোংরা লন্ড্রি রেখে। তেমনি দিনের শেষটা হয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য এসি বা ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে। দিনের প্রতিটি খাবারের সময় আমরা ফ্রিজ এবং মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করি। ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য মানুষের জীবনযাত্রা কত সহজ করেছে তা অল্প সময়ে ব্যাখ্যা এবং পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজার ও সিলিং ফ্যান উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদনের জন্য কারখানার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে

আমরা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কনকা ব্র্যান্ড রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, গ্রি ব্র্যান্ড এয়ারকন্ডিশনার এবং কনকা ও হাইকো ব্র্যান্ড সিলিং ফ্যান সম্পূর্ণ উৎপাদন করছি। আমাদের উৎপাদিত পণ্যগুলোয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সম্বন্বয়। যেমন গ্রি এসি বিল্ড ইন ইনভার্টার টেকনোলজি সমৃদ্ধ (১.০ থেকে ৫.০ টন) পর্যন্ত এবং পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাস R32 । গ্রি এসিতে আছে বায়োলজিক্যাল ফিল্টার, ক্যাচেইন ফিল্টার, সিলভার আয়রন ফিলটার এবং ক্লোজসমা এয়ার পিউরিফিকেশন টেকনোলজি যা ঘরের বাতাস সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ করতে সক্ষম। বিশ্বের প্রথম বুস্ট ইনভার্টার কমপ্রেসার থাকায় গ্রি এসি সর্বাধিক মাত্রায় ৭০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। আমাদের উৎপাদিত কনকা রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার পণ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় একে এনে দিয়েছে বাজার খ্যাতি ও বিশেষ সুনাম এবং অন্যান্য ফ্রিজ থেকে আলাদা যেমন ব্লু-জোন অ্যান্ড ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি, অ্যাকটিভ কার্বন ডিয়োডোরাইজার, হিউমিডিটি কন্ট্রোলার, অ্যান্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাস্কেট, ডিজিটাল ডিসপ্লে ইনভার্টার টেকনোলজি, কনকা ডিপ ফ্রিজার অটো টেকনোলজি। আবার বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কনকা, গ্রি ও হাইকো ব্র্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মিক্সার গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক ক্যাটল, গ্যাস স্টোভ, ইনফ্রেইড কুকার, প্রেশার কুকার, রাইস কুকার, ইলেকট্রিক আয়রন, গ্রি ব্র্যান্ড এয়ারকুলার, এয়ারকার্টেন, এয়ারপিউরিফায়ার, ডিহিউমিডিফায়ার, ওয়াটার ডিসপ্রেসনাসহ বেশ কিছু হোম অ্যাপ্লায়েন্সের পণ্যের কিছু যন্ত্রাংশ আমদানি করে উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার অধিক।

বর্তমানে দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা বিশাল। বিশাল জনগোষ্ঠী, দ্রুত নগরায়ণ, কর্মজীবী ছোট পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি, সরকারের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টায় মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে গ্রামীণ পর্যায়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দ্রুত হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের উৎপাদিত পণ্য বর্তমানে দেশেই বিক্রি হয়। তবে অতি শিগগিরই আমরা রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। কনকা, হাইকো ও গ্রি ব্র্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের বর্তমান বাজার চাহিদা পণ্যভেদে বিভিন্ন রকম। কনকা ফ্রিজ বাজার চাহিদার প্রায় ২৫-৩০ শতাংশের অধিক বিক্রির মাধ্যমে বৃহৎ স্থান দখল করে আছে। গ্রি ব্র্যান্ড এয়ারকন্ডিশনার বাজার চাহিদার ৬০ শতাংশের অধিক বিক্রির মাধ্যমে প্রথম স্থান দখল করে আছে। এ ছাড়া কনকা, গ্রি ও হাইকো ব্র্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য ১৫-২০ শতাংশের অধিক বিক্রি হচ্ছে। অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ব্যাপক। এ শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে ২ থেকে ২.৫ লাখের বেশি লোক জড়িত। এ ছাড়া এ খাতে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

আমরা ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজার ও সিলিং ফ্যান উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন পরিচালনা করছি। পাশাপাশি অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদনের জন্য কারখানার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। খুব শিগগিরই আমরা নিকটবর্তী দেশগুলোয় রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ করছি।

বর্তমানে সরকারের নীতি ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় আছে। ফলে আমাদের আবেদন, সরকার যেন এ খাতে প্রদত্ত সুবিধাদি আরও ১০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। বাংলাদেশে যথাযথ নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বেনিফিটটা যেন স্থায়ী ভিত্তিতে দেয়। হাজার কোটি টাকার একটি বিনিয়োগ প্রকল্পে রিটার্ন পাওয়ার নিশ্চয়তা সবাই চায়। রিটার্ন পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আসবে না। নতুন যেসব বিনিয়োগকারী এ খাতে বিনিয়োগ করছেন তাঁদের বিনিয়োগও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সরকার এ সুবিধাটা ২০৩০ সাল পর্যন্ত দিলে এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ সম্ভব। কারণ শ্রমিক সংকটের ফলে চীনসহ ইউরোপের দেশগুলো এসব শিল্পে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে এ সুবিধাটা নেওয়ার সুযোগ আমাদের রয়েছে। সরকারের নীতিসহায়তা অব্যাহত থাকলে গার্মেন্টস ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে এ খাতও আগামীতে একটি রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে পরিণত হবে বলে আমরা আশাবাদী। হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য বিক্রির জন্য সবচেয়ে ভালো সময় দেশের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের আগে যেমন গ্রীষ্মের শুরুতে, রমজান, ঈদ, পূজাপার্বণ ইত্যাদি ঘিরে এসব পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। দেশের দুটি বড় উৎসব ঈদ ঘিরে আমাদের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এ সময় বিশেষ অফার থাকায় গ্রাহকরা পণ্য কেনায় বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বার্ষিক চাহিদার ২৫ শতাংশের অধিক পণ্য এ সময়ে বিক্রি হয়। এ ছাড়া গ্রাহকরা বছরব্যাপী কোম্পানির বিভিন্ন অফারের সুবিধা নিয়ে পণ্য কিনে থাকেন।

সর্বশেষ খবর