রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

একদিকে উচ্ছ্বাস অন্যদিকে হতাশা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

একদিকে উচ্ছ্বাস অন্যদিকে হতাশা

বাংলাদেশের ফুটবলে এখন দুই চেহারা। একদিকে উৎসব আরেকদিকে হতাশা। পুরুষ জাতীয় দল ব্যর্থতায় বন্দী। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অথচ মেয়েরা একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে। এক সময় দেশের ফুটবল বলতে পুরুষদেরই বোঝাত। বিশেষ করে ৯০ দশক পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তারকা বলতে ফুটবলারদেরই বোঝাত। এখন তারকাতো দূরের কথা জাতীয় দলে যারা খেলছেন তাদের চিনতে হয় জার্সি নম্বর দেখে। অন্য জেলায় দর্শকের দেখা মিললেও ঢাকায় গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। একের পর এক কোচ পরিবর্তন করা হচ্ছে কিন্তু ফুটবলে করুণ দশা কাটছে না। শেষ সাফল্য এসেছিল ২০১০ সালে এস এ গেমসে সোনা জয়ে। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে রানার্সআপ হয়েছিল। এবারে ফাইনালেও উঠতে পারেনি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এশিয়ান গেমস, এস এ গেমস ও চ্যালেঞ্জ কাপে হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না জাতীয় দল।

যে মালদ্বীপ মোহামেডান বা আবাহনীর সামনে দাঁড়াতে পারত না তারাই কিনা এখন জাতীয় দলকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। ডিসেম্বর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্ব ম্যাচে ০-৩, আর এবার মালেতে প্রীতিম্যাচে ০-৫ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। যা দেশের ফুটবল ইতিহাসে বড় লজ্জা বলা যায়। বাংলাদেশকে ভুটান রুখে দেবে এক সময় ভাবাই যেত না। ওদের বিপক্ষে লড়াই মানে গোল উৎসবে মেতে উঠা। সেই ভুটানও গোলশূন্য ড্র করেছে। তাও আবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। অক্টোবরে থিম্পুতে এশিয়ান কাপ প্লে-অফ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ লড়বে। ভুটানের বিপক্ষে কখনো হারের রেকর্ড নেই। এবার কিন্তু থিম্পুর ম্যাচ ঘিরে ফুটবলপ্রেমীরা শঙ্কিত। ফুটবলে যে অবস্থা তাতে ভুটানের কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিভাবে দুর্দশা কাটানো যায় সেই চিন্তা বাফুফের কর্মকর্তা করছেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফুটবল উন্নয়নে শুধু বড় বড় কথাই শোনা যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

বড়রা ব্যর্থ হলেও ছোটরা আশার আলো জাগিয়েছে। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দুর্ভাগ্যক্রমে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। বাফুফে এদের প্রতি মনোযোগী হলে হয়তো ভবিষ্যতে দুর্দশা থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। তা না হলে অন্ধকারেই পড়ে থাকবে ফুটবল। এক সময় ভাবাই যেত না বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবল খেলবে। অনেক বাধা বিপত্তির পরও খেলতে নামে। কারণ ফিফার গাইড লাইন অনুযায়ী পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদেরও ফুটবল খেলতে হবে। এ জন্য আবার আলাদা ফান্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে। সুতরাং ফিফার সদস্যদের মহিলা দল গড়তেই হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফল্যের পতাকা উড়াবে তা ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে মেয়েরা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে দুবার ট্রফি জিতেছে। এবারতো ইতিহাসই গড়ে ফেলল কৃষ্ণা, মার্জিয়ারা। প্রথমবারের মতো এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই আসরে বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপের লড়াইয়ে ইরান, সিঙ্গাপুর, কিরগিজস্তান, চাইনিজ তাইপে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে গোলের বন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কৃষ্ণারা। মহিলা জুনিয়র লেভেলে এশিয়ার সেরা আটে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এটা কম বড় প্রাপ্তি নয়। গোটা দেশ তাদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনাও দেবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা দিয়েছে কৃষ্ণাদের ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার। মেয়েরা প্রশংসায় ভাসছে, অন্যদিকে পুরুষ জাতীয় দলকে ঘিরে হতাশা বেড়েই চলেছে। ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরুষ ফুটবলারদের সংবর্ধনা জানান হয়। এরপর কোনো সংবর্ধনা জোটেনি। অনূর্ধ্ব-১৬ দল সাফল্য পাওয়ার পর মেয়েদের ফুটবল উন্নয়নে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যার ঘোষণা আসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই।

সর্বশেষ খবর